সুকুমার সরকার, ঢাকা: সদ্য মা হয়েছেন। এখনই কোনওরকম অনিয়ম নয়, কড়া নির্দেশ চিকিৎসকদের। তবে জ্ঞান আহরণের অদম্য ইচ্ছাকে রুখবে কে? তাই ৫ দিনের সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষায় বসলেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরার তরুণী আশুরা আখতার পিংকি। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পরীক্ষা দিলেন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পিংকি পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে তাঁর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। পরীক্ষার্থীর পাশে সদ্যোজাতের ঘুমনোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় লেখার মাঝেই সন্তানকে দুধ খাইয়েছেন পিংকি। ভালভাবে পরীক্ষা দিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ধন্যবাদ দিয়েছেন।
সাতক্ষীরার দেবহাটার কাজিমহল্লা গ্রামের বাসিন্দা আশুরা আখতার পিংকি। ওই গ্রামের শেখ রাজু আহমেদের মেয়ে ও একই উপজেলার কোড়া গ্রামের মাসুদ হোসেন সুজনের স্ত্রী তিনি। গত ৩০ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এক শিশুকন্যার জন্ম দেন পিংকি। সন্তান প্রসবের পরই পিংকি ডাক্তারদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি এই অবস্থায় পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না। চিকিৎসক তাঁকে বলেন, এতে সমস্যা হতে পারে। সরাসরি নিষেধ না করলেও চিকিৎসকরা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে বিশ্রাম নেওয়াই এখন ঠিক। কিন্তু পিংকি তা মানেননি। তিনি তাঁর শিশুকন্যা ও স্বামী সুজনকে নিয়ে বুধবার পরীক্ষা দিতে পৌঁছে যান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে।
পিংকি যেখানে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তার পাশেই শিশুকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মাঝে মাঝে পিংকি শিশুটিকে বুকের দুধ খাইয়েছেন। পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম জানান, ”পিংকি দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্রী। বুধবার ছিল তাঁর পলিটিক্যাল সায়েন্সের পরীক্ষা। আমরা তাঁকে নিয়মানুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সহায়তা করেছি।” আর পিংকি বলেন, ”লেখাপড়ায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সহযোগিতা আছে। তাঁদের উৎসাহ পেয়েই আমি পরীক্ষায় বসেছি। আর এ কারণেই আমি অসুস্থতাকে ভয় পাইনি মোটেও। পরীক্ষায় অংশগ্রহণে শিক্ষক ও চিকিৎসকদের সহায়তাও আমাকে অণুপ্রাণিত করেছে।”
এর আগে এমনই ঘটনা ঘটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। যাতে দেখা যায়, পরীক্ষা দিচ্ছেন ছাত্রী আর তাঁর শিশু সন্তান কোলে পরীক্ষার হলের বাইরে বসে রয়েছেন শিক্ষক। সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রশংসায় ভেসেছেন বাংলাদেশের শিক্ষক আহমেদ মাহবুবুল আলম। বাড়িতে কেউ না থাকায় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ঢাকার আশুলিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। বাচ্চাকে কোলে নিয়েই পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি।
এই দৃশ্য দেখে ছাত্রীর সুবিধার্থে এগিয়ে যান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আহমেদ মাহবুবুল আলম। পরীক্ষার্থীর শিশু সন্তানকে নিজের কোলে তুলে নেন তিনি। মুহূর্তে সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাটি। পরীক্ষার হলে ছাত্রীর সন্তানকে কোলে রাখায় শিক্ষক মাহবুবুল আলমের প্রশংসা পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। এরপর সদ্য মা হওয়া পিংকি যেভাবে সাহসের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাতে তাঁর প্রশংসা না করেও উপায় নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.