সুকুমার সরকার, ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ (Bangladesh) জুড়ে চূড়ান্ত আইনি বিশৃঙ্খলা। আর এই সুযোগে দুষ্কৃতীরা কোটা আন্দোলনে কয়েকশো মানুষের প্রাণহানির দায় চাপিয়েছে পুলিশের উপর। শাসকদল আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগে নেমে পড়ে। লিগের নেতা-কর্মীরা জীবনের ভয়ে পালিয়ে গেলেও সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাননি। তবে অনেক স্থানে হিন্দুরা আক্রান্ত হয়েছেন। ধর্মস্থানের পাশাপাশি তাঁদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে। এবার সেসব ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি ও লুটপাট থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করতে সোমবার রাত থেকে লাঠি, বাঁশি ও টর্চলাইট নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন।
শুধু গ্রামগঞ্জে নয়, রাজধানী ঢাকাতেও (Dhaka) কয়েকটি এলাকায় ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এসব ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও (Social Media) জানিয়েছেন নিজেদের এলাকায় ডাকাতির কথা। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি বাসার বাসিন্দারা বলেন, বুধবার রাতে সেখানে ডাকাতি হয়েছে। বসিলা এলাকার একজন জানান, গভীর রাতে একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের পাশের বাসায় এসে হামলা চালায়। জোরপূর্বক বাসার মূল ফটক খুলে তাঁরা নগদ টাকা, অলংকার লুট করে নিয়ে যায়। এই সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এবারও যশোর, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালিতে হিন্দুদের (Hindu) বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। হামলা হয়েছে সাতক্ষীরার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও। যশোর শহরের বেজপাড়ার বনানী সড়কে সোমবার রাত সোয়া নটার দিকে লক্ষ্মীরানির বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে লক্ষ্মীরানির আয়ের একমাত্র অবলম্বন সেলাই মেশিন, গ্যাস সিলিন্ডার এবং আলমারিতে রাখা ভাইয়ের সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর ১০ ভরি সোনার গয়না লুট (Loot)করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরার তালার খলিশখালি গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ লাহিড়ী, হাজরাপাড়া গ্রামের সুব্রত লাহিড়ী এবং কুমিরা গ্রামের স্বপন দে, মধু ঘোষ, প্রদীপ পাল, অচিন্ত্য দাস, আদিত্য ঘোষ, আশিষ ঘোষ-সহ ৮/১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণেশ দেবনাথ ও একই এলাকার দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, খলিলনগর ইউপির চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ, ইসলামকাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ সেনের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালির কলাপাড়ার পাখিমারা বাজারসহ পার্শ্ববর্তী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে বুধবার বিকেলে পাখিমারা বাজারে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি (BNP)। সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন শিকদার বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আর কোনও হামলা হবে না। সংখ্যালঘুদের কারও ক্ষতি হলে তিনি আর দলের সভাপতি থাকবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.