সুকুমার সরকার, ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শাসকদল আওয়ামি লিগকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে মানহানির মামলা দায়ের হয়েছিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। সেই মামলার ভিত্তিতে কারাগারে থাকা বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। রবিবার ঢাকা মহানগর আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এই পরোয়ানা জারি করেন। অন্যদিকে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় খালেদা জিয়াকে ছ’মাসের জন্য জামিন দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে।
প্রথমে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামি লিগকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩০ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন তদন্তকারী ও শাহবাগ থানার ওসি (তদন্ত) জাফর আলি বিশ্বাস। তারপর এই মামলার বাদী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন হয়। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেওয়ায় এ দেশের জনগণ যুদ্ধে নেমেছিলেন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেছিলেন, “বর্তমান আওয়ামি লিগ সরকারের আমলে উন্নয়নের নামে চলছে দুর্নীতি ও লুটপাট। দলীয় লোকদের জঙ্গি বানিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যা করা হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের নেতা ও কর্মী-সহ ভাল ভাল লোককে গ্রেপ্তার, গুম ও হত্যা করছে। উন্নয়নের নামে পদ্মা সেতু ও ফ্লাইওভারের কাজে দেরি করে সেটিকে ব্যয়বহুল কাজ দেখিয়ে লুটপাট করছে।”
তাঁর এই বক্তব্যের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর আদালতে আবদুল্লাহ আল মাসুদের এজলাসে মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকি। অপরদিকে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয়। এতে আটজন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ও ২৭ জন জখম হন। এই ঘটনার পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি ৫৬ জন বিএনপি ও জামাতের নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করে পুলিশ।
রবিরার আদালতে মামলা ওঠার আগেই কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনশন শুরু করে বিএনপি-এর নেতা-কর্মীরা। ঢাকার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ক্যাম্পাসে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে এই অনশন। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলার জেরে এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে বর্তমানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে রাখা। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থারাইটিস ও ডায়াবেটিস-সহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তাই বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময়ে তাঁকে হুইলচেয়ারেই বসে থাকতে দেখা গেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.