সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কিছু বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। বাণিজ্যে বড়সড় ঘা খেয়ে নড়েচড়ে বসেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী তারা। এবার আরও সুর নরম করে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, বাণিজ্যে ভারতের সিদ্ধান্তের পালটা কোনও পদক্ষেপ করবে না ঢাকা। দু’দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের আলোচনায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।
জানা গিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রকে আয়োজিত জরুরী আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। বিভিন্ন মন্ত্রকের দপ্তর, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন আর বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ। একে অপরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যে যাতে আর ক্ষতি না হয় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। আলোচনার পর বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সংবাদমাধ্যমে জানান, “আমরা কোনও পালটা পদক্ষেপে যাব না। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বাণিজ্য সচিব-পর্যায়ের বৈঠকের অনুরোধ করে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।”
গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ চারটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতো আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায়। এরপর ভারত সরকার বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে। এরপর ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চিনের পর ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন ব্যবসায়ী জানান, বকেয়া চালানগুলো পাঠাতে তিন মাসের জন্য স্থলবন্দর ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে অবিলম্বে ভারত সরকারকে চিঠি দিতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থলবন্দর ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, গত ১০ মাসে বাংলাদেশ এই পথ দিয়ে ৩.৫ লক্ষ টন পণ্য আমদানি করেছে সরকার। কারণ সমুদ্রপথ ব্যবহার করে ব্যবসা করা ব্যয়বহুল। আর বকেয়া চালানগুলো যদি সরবরাহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০.৫৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ বাণিজ্য হয় সড়কপথে। রিপোর্ট বলছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪২ শতাংশ। সাধারণত সমুদ্রপথের তুলনায় সড়কপথে বাণিজ্যে খরচ অনেক কম হয়। এখন থেকে এই সব পণ্য সমুদ্রপথে ভারতে পাঠাতে গেলে বাংলাদেশের খরচ পড়বে অনেক বেশি। আর্থিকভাবে দুর্বল বাংলাদেশের জন্য যা বড়সড় ধাক্কা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা চিনের ওপর যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের এই পদক্ষেপ তার চেয়েও কঠোর। রীতিমতো বিপাকে পড়ে এবার আরও সুর নরম করল ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.