সুকুমার সরকার, ঢাকা: ধর্মের নামে কথিত ‘ফতোয়া’র কারণে ৩৮ বছর পর ঘরে ফিরে এসেও বিনাদোষে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না বৃদ্ধ নুরুজ্জামান (৬০)। বাংলাদেশের উত্তর জনপদ জেলা নওগাঁর সাপাহার থানার নুরুজ্জামান নিখোঁজ হয়ে যান। নিখোঁজের তিন দশক পর ঘরে ফিরে আসায় নুরুজ্জামানের গোটা পরিবারে আনন্দের বন্যা বইলেও গ্রাম্য ফতোয়ার কারণে গত চারদিন ধরে সাপাহার থানার দক্ষিণ আলাদীপুর গ্রামের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এখনও দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।
তিন যুগ পর ফিরে আসা নুরুজ্জামানের পারিবারিক ও এলাকাবাসী জানায়, ওই গ্রামের মৃত বাঘ রাজ্জাকের ছেলে ২২ বছরের টগবগে যুবক নুরুজ্জামান ১৯৮২ সালে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বাবার ওপর রাগ করে স্ত্রী ও সন্তান রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এর পরে তার পরিবারের লোকজনেরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে হাল ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজনের ধারণা তিনি হয়তো ভারতে গিয়েছেন অথবা মারা গিয়েছেন। এই ধারণা নিয়ে নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফন বিবি সে সময় তার গর্ভের সন্তান-সহ নাবালক দুই ছেলেকে নিয়ে উপজেলার কৃষ্ণসদা গ্রামে তাঁর বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং এখন পর্যন্ত কোনও দ্বিতীয় বিয়ে না করেই সেখানে সন্তানদের নিয়ে বাবার সংসারে বসবাস করে আসছেন। তাঁর সন্তানরা বড় হয়ে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। তাঁদের মা স্বামীর প্রতীক্ষায় সন্তানদের সংসারে রয়েছেন।
এমন অবস্থায় গত সপ্তাহে দুপুরে হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হওয়া নুরুজ্জামানের আগমন ঘটে তার বাবার বাড়ি দক্ষিণ আলাদিপুর গ্রামে। দীর্ঘ ৩৮ বছর পর গ্রামে ফিরে আসায় নুরুজ্জামানকে নিয়ে গ্রামে বেশ হইচই পড়ে যায়। খবর পেয়ে দাদুর বাড়িতে থাকা তাঁর ছেলেরা ছুটে চলে আসেন বাবাকে এক নজর দেখার জন্য। মুহূর্তে সেখানে বাবা-ছেলের মধ্যে ঘটে এক মিলনমেলা। এই দৃশ্য দেখার জন্য শত শত মানুষ সেখানে ছুটে আসেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইচ্ছে থাকলেও গ্রাম্য মাতব্বরদের ফতোয়ার কারণে একে অপরের সঙ্গে এখনও সাক্ষাৎ কিংবা দেখা করতে পারেননি তাঁরা। গ্রামের লোকজন বলছে কেন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ১২ বছর সম্পর্ক না থাকলে সে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমনিতেই বিচ্ছেদ ঘটে যায়। এখন তারা আর স্বামী-স্ত্রী নয়। এ কথার ওপর ভিত্তি করে তাঁদের (স্বামী-স্ত্রী) মধ্যে দেখা কিংবা কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
তিন যুগ পর ফিরে আসা নুরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সে সময় তিনি তাঁর বাবার উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন রংপুর শহরে থেকে জীবনযাপন করতে থাকেন। ১৯৮৫ সালের দিকে আর বাড়ি ফিরবে না প্রতিজ্ঞা করে সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাতেন। এরই মধ্যে সেখানে তাঁর সে সংসারে ৩টি ছেলের জন্ম হয়। এর মধ্যে নিজের বাড়িতে ফিরতে তাঁর ইচ্ছে হলেও বিভিন্ন কারণে তাঁর আসা হয়নি। এখন তিনি দুটি সংসারই রেখে নতুন করে আগের সংসারের সাথে সম্পর্ক রাখতে চান। প্রথম স্ত্রী আরিফন জানান, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা ও সংসার করতে চান। তবে শরিয়তের কোনও বিধিনিষেধ থাকলে সেগুলো মান্য করে তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান। তবে গোয়ালা ইউনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মুকুল জানান, তিনি সমাধান করে দেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.