ছবি: প্রতীকী
সুকুমার সরকার, ঢাকা: সাধারণত প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে স্বামীকে খুন করে আজকের রমণীরা! কোথাও বা আবার প্রেমিকাকে কাছে পেতে স্ত্রীকে খুন করে পুরুষ। কিন্তু, সংসার বাঁচাতে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রেমিককে খুনের ঘটনা মনে হয় খুব কমই ঘটে! সম্প্রতি এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের পাবনা জেলার সাঁথিয়ায়।
স্বামী ঠান্ডু মোল্লা (৩৭) কাজের সূত্রে বিদেশে থাকত। সেই সুযোগে ময়মনসিংহের এক যুবক শহিদুল ইসলামের (৩২) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে সালমা খাতুনের(৩২)। দেশে ফেরার পরেই বিষয়টি বুঝতে পারে ঠান্ডু মোল্লা। সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে সালমা। আর তাকে সঙ্গে নিয়ে অন্য একজনের সাহায্যে খুন করে প্রেমিক শহিদুলকে। তিন বছর আগে এই ঘটনাটি ঘটলেও কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সিআইডিও কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে চালিয়ে দায়সারাভাবে চার্জশিট দেয়।
কিন্তু, সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন পিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার ওই দম্পতির সহযোগী হায়াত আলিকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। পিবিআই পাবনার সদস্যরা হায়াত আলিকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এপ্রসঙ্গে পিবিআই পাবনা জেলার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমনকান্তি চৌধুরি জানান, কয়েক বছর আগে ঠান্ডু মোল্লা স্ত্রী সালমা খাতুনকে ময়মনসিংহে বাবার বাড়িতে রেখে ওমানে যায়। এই সুযোগে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে সালমা। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষেপে যায় তার স্বামী। দেশে ফিরে এসে স্ত্রীর কাছে সব জেনে শহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সংসার বাঁচাতে স্বামীকে সাহায্য করে সালমা। এরপর ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর শহিদুলকে কৌশলে ময়মনসিংহ থেকে পাবনার সাঁথিয়ায় নিয়ে আসে। সন্ধেয় সালমা সাঁথিয়ার চতুর বাজারের একটি জায়গায় তার সঙ্গে গল্প করছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে এসে শহিদুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় হায়াত আলি ও ঠান্ডু মোল্লা। মারাত্মক জখম অবস্থায় শহিদুলকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। পরেরদিন ১৭ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
এই ঘটনার পর নিহতের ভাই পাহাড়ী রাজু সাঁথিয়া থানায় মামলা করেন। কিন্তু, সাঁথিয়া থানার পুলিশ এই মামলার কুলকিনারা করতে পারেনি। পরে সাঁথিয়া থানা থেকে মামলাটির তদন্তভার পাবনা জেলা সিআইডি গ্রহণ করে। তারা মামলা থেকে তিনজন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে হায়াত আলি ও ঠান্ডু মোল্লাকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। বাদীপক্ষ এতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আবেদন করলে, আদালত মামলার তদন্তভার পাবনা জেলা পিবিআইকে দেয়।
পিবিআইয়ের পাবনা জেলাপ্রধান এসআই মহম্মদ সবুজ আলিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। আর তিনিই তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে এই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন। তবে এই ঘটনার পরই ওমানে পালিয়ে যায় মূল অভিযুক্ত ঠান্ডু মোল্লা। এখনও পর্যন্ত শুধু হায়াত আলিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে সে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.