সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব উঠল মার্কিন কংগ্রেসে। গত ১৩ জুন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাজেট বিষয়ক শুনানিতে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান।
তিনি বলেন, “সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেছিল আমেরিকা। তাহলে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেন একই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। মায়ানমার যদি তাদের দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে যে দেশ দায়িত্ব নিয়েছে সেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে জুড়ে দেওয়াই তো যুক্তিযুক্ত হবে। রোহিঙ্গারা এমন একটি সরকারের অধীনে থাকতে চায়, যারা তাদের নিধন নয়, সুরক্ষার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করবে।”
ব্র্যাড শেরম্যানের এই প্রস্তাবকে আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহফুজ আর চৌধুরি। তিনি বলেন, “এ প্রস্তাবের হান্ড্রেড পার্সেন্ট সমর্থন জানাতে চাই। এর বাইরে অন্য কিছুতেই রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে না। তবে এই প্রস্তাবে সম্মতি লাগবে চিনের। চিন ছাড়া সম্ভব নয়। এর জন্যে বিশ্বজনমত তৈরি করতে হবে, চিনকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে।”
যদিও নিউইয়র্ক সফররত ঢাকার অঙ্কুর প্রকাশনা সংস্থায় ডিরেক্টর মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ প্রস্তাবের যুক্তি থাকলেও বাস্তবতা নেই। একটি অঞ্চলকে স্বাধীন করা যতটা সহজ, অন্যদেশের সঙ্গে যুক্ত করা ততটাই কঠিন। এর আগে মালয়েশিয়া থেকে ছোট্ট একটি দ্বীপ সিঙ্গাপুরও স্বাধীন হয়েছে। রাখাইনের মুসলিম সম্প্রদায় সবসময়ই অবহেলিত, উপেক্ষিত মায়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাতে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পার্লামেন্টে ডেমোক্র্যাট সেনেটর বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এজন্য যা করলে ভাল হয় সেখানেই আমার সমর্থন থাকবে। কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শারমেনের প্রস্তাবেও আমি একমত। তবে এক্ষেত্রে মায়ানমারের সামরিক শাসক জুন্টাকে বাধ্য করতে জনমত তৈরি করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর খোঁজখবর রাখেন এমন প্রবাসীরা বলছেন, ১৯৭৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসনের পূর্ব তিমুরে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকা আজ একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। এরপর একইভাবে দক্ষিণ সুদানের উৎপত্তি ঘটেছে। রাখাইন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় মোটেও আগ্রহী নয় মায়ানমারের প্রশাসন। তাই তাদের স্বাধীন একটি ভূখণ্ড দিতে হবে না হলে ওই এলাকাকে বাংলাদেশের অংশে পরিণত করাই শ্রেয়। তাহলেই রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপনে সক্ষম হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.