সুকুমার সরকার, ঢাকা: পেটের দায় বড় দায়! তাই জঠরের জ্বালা মেটাতে অক্সিজেন নল লাগিয়েই রিকশা টানছিলেন মাইনুজ্জামান সেন্টু। তবে দয়ার পাত্র হওয়ার চাইতে সম্মানের লড়াই শ্রেয় মনে করে প্রায় সাত বছর ধরে জীবনযুদ্ধ চালাচ্ছেন তিনি। এবার তাঁর ত্রাতা হয়ে আসরে নেমেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশের উত্তর জনপদের বিভাগীয় জেলাশহর রাজশাহীর বাসিন্দা সেন্টু। দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন তিনি। সংসার চালাতে নাকে অক্সিজেন নল লাগিয়ে রিকশা চালাচ্ছিলেন তিনি। তবে শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠায় সেন্টু এখন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই কথা জানতে তাঁর চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
জানা গিয়েছে, শ্রম ও কর্মসংস্থাপন মন্ত্রকের অধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সেন্টুর চিকিৎসার জন্য সহায়তার ঘোষণা করা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহীর আধিকারিক মহম্মদ আরিফুল ইসলাম মাইনুজ্জামান সেন্টুর চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন।
এই বিষয়ে জানতে চওয়া হলে সেন্টু বলেন, “ডাক্তার বলেছেন আমার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন কনসেনট্রেটর নামের একটি যন্ত্র কিনতে হবে। সেটা সব সময় নাকে লাগিয়ে রাখতে হবে। তাতে বাতাস থেকে অক্সিজেন আসবে। এই মেশিনের দাম ৫০ হাজার টাকা। আমার কাছে ওই যন্ত্র কেনার টাকা নেই। রিকশাও চালাতে পারব না।”
সেন্টুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক হাসান তারিক জানান, সিওপিডি ও যক্ষ্মার জন্য সেন্টুর ফুসফুস দুর্বল হয়ে গিয়েছে। হৃদযন্ত্রের সমস্যাও আছে। এই জন্য তিনি ঠিকমতো অক্সিজেন টানতে পারছেন না। বৈদ্যুতিক ‘কনসেনট্রেটর’ নামের যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি বাতাস থেকে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন টেনে নিতে পারবেন।
রাজশাহী নগরের কলাবাগান মহল্লার বাসিন্দা মাইনুজ্জামান সেন্টু সেখানেই রিকশা চালাতেন। ওই এলাকায় দু’হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে স্ত্রী চম্পা বেগমকে নিয়ে থাকেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে বিয়ের পর আলাদা সংসার পেতেছেন। গত পাঁচ বছর ধরে সেন্টু ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। সেই সমস্যা নিয়েই তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন মাইনুজ্জামান। দু’বছরের মাথায় নগরের ঘোষপাড়ার মোড়ে রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। পরে আবার ঋণ করে আরেকটি রিকশা কেনেন তিনি। সবমিলিয়ে, চরম সংকটের মধ্যে লড়াই চালাতে হচ্ছে তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.