সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নতুন ছাত্র সংগঠন প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল অশান্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাতাহাতিতে জড়ালেন পড়ুয়ারা। কয়েকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ফাটল ধরেছে। সেই জল্পনা উসকে আজ বুধবার, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে নতুন সংগঠনের নাম ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধীর কয়েকজন প্রাক্তন সমন্বয়ক। কিন্তু নতুন সংগঠনের নাম প্রকাশ্যে আসতেই গোল বাঁধে। একদল শিক্ষার্থী এসে নিজেদের পদ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। অশান্তি গড়ায় তুমুল হাতাহাতিতে। এই ঘটনাতেই প্রশ্ন উঠছে, বিপ্লব নয় তাহলে কি ক্ষমতা দখলই আসল উদ্দেশ্য ছাত্রদের?
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, নতুন এই ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হয়েছেন আবু বাকের মজুমদার। আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন জাহিদ আহসান। আজ বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেদের পর্যাপ্তসংখ্যক পদ দাবি করে বিক্ষোভ করেন। তখনই দুই পক্ষ স্লোগান পালটা স্লোগান দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারপরই পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
জানা গিয়েছে, নতুন সংগঠনের নাম প্রকাশের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান নেতারাও। তাঁরা মিছিল নিয়ে মল চত্বরের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে পদবঞ্চিত দাবি করে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় দফায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেই সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। কিন্তু অশান্তি থামেনি। পরে সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে আরেক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, শুক্রবারই আত্মপ্রকাশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন রাজনৈতিক দল। তার আগে গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। কারণ নতুন এই দলের নেতা হবেন তিনি। তাই নাহিদ আগেই জানিয়েছিলেন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেবেন। কিন্তু এই রাজনৈতিক দল তৈরি নিয়েই ফাটল ধরেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে বলেই খবর। কারণ কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পড়ুয়ারা। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না আহ্বায়ক কমিটি তথা হাসনাত, সারজিস বা হান্নান মাসউদদের কেউই। এনিয়ে ভাঙনের জল্পনার পালে হাওয়া লাগে।
সেদিন নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা করে এক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, “নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য নতুন ছাত্র রাজনীতি দরকার। এজন্য নতুন ধারার লেজুড়বৃত্তিহীন ছাত্র রাজনীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। যারা নতুন ছাত্রসংগঠনে যোগ দেবে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে পদত্যাগ করে যাবে।” এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরমুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, “এদিন আমাদের আহ্বায়ক কমিটির কোনও সদস্য ছিলেন না, সেটা ঠিক। তবে এখানে এ ধরনের কোনও দ্বন্দ্ব নাই। যেহেতু রাজনৈতিক দল গঠনের আগে ছাত্র সংগঠন গঠনের কথা বলা হয়েছে, তাই সবার সম্মতিতেই এটি হয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্ররা মুখে যাই বলুক না কেন নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের মাথা নাহিদ ইসলামকে করা নিয়ে নানা মতবিরোধ ছিল। কারণ ‘জুলাই আন্দোলনে’র পর কয়েকজনই সরকারের উচ্চপদে জায়গা পেয়েছেন। উপদেষ্টা হয়েছেন। সেনিয়ে নানা ক্ষোভ ছিল বৈষম্যবিরোধীদের অন্দরে। এখন নতুন রাজনৈতিক দলেরও মাথা হচ্ছেন তাঁরাই। তাই ক্ষমতা বণ্টন নিয়েই এই ফাটল। এবার নতুন ছাত্র সংগঠন আসার পরও এই পদ নিয়েই লড়াই শুরু হয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.