সুকুমার সরকার, ঢাকা: পদ্মা সেতু নির্মাণের বরাত পেয়ে নদীতে পশুরক্ত ঢেলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন বরাতপ্রাপ্ত চিনা সংস্থার কর্মীরা৷ চৈনিক রীতি অনুযায়ী, এভাবে কাজের সূচনা করা শুভ লক্ষ্মণ৷ তবে এদিন পশুরক্ত ঢেলে কাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই গুজব ছড়িয়েছে, এই কাজে নরমুণ্ডও লাগবে৷ তবে গুজব ছড়ানো মাত্রই আসরে নেমেছে সেতু কর্তৃপক্ষ৷ সতর্কতামূলক প্রচার করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশে সেতু নির্মাণ বা বড় কোনও স্থাপত্য নির্মাণকাজে নরবলির গুজব নতুন কিছু নয়। একই মতবাদে বিশ্বাসী চিনের মানুষজনও। এবার পদ্মা সেতু নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়ে একটি চিনা সংস্থাকে৷ তাঁদের বিশ্বাস, বড় কাজের শুরুতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়৷ এড়ানো যায় বড় দুর্ঘটনা। মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপনের সময় নদীতে গরু ও খাসির রক্ত ঢালতে দেখা যায় চিনা সংস্থার কর্মীদের। ভাসিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মুরগিও। আর তারপরই গুজব রটে যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে৷
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কার্যালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া গুজব নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি মহল সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি তুলে ধরে ঐ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে, ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা প্রয়োজন হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। সেতু নির্মাণের জন্য ওই অঞ্চলের কাছে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন বয়সি মানুষ অপহৃত হচ্ছে বলেও গুজব ছড়িয়েছে৷ ফলে এলাকায় মানুষের মধ্যে ভিত্তিহীন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ তবে কোনও এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেই কোনও অপহরণের খবর পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন এমন একটি ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে পড়ল, যার কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হল? এই অপপ্রচারের প্রতিবাদ করতে হল?
গত বছর পদ্মায় মূল সেতু তৈরির দায়িত্ব পায় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সেতু তৈরির এই মহাযজ্ঞে চিনের প্রায় ১৫০ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং ৩৫০ জন কর্মী অংশ নিয়েছেন৷ কর্মরত এসব চিনা নাগরিকরা তাঁদের প্রথাগত বিশ্বাস ও রীতি অনুযায়ী দুটি কালো ষাঁড়, দুটি খাসি এবং দুটি মোরগ পদ্মা তীরে কেটে তাদের রক্ত ঢেলে দেন পদ্মায়। এছাড়া ষাঁড়ের সামনের দুটি পা এবং দুটি মুরগিও তাঁরা ভাসিয়ে দেন। অবশ্য অবশিষ্ট মাংস কর্মরত চিনা শ্রমিকদের বিতরণ করা হয়। পশু উৎসর্গের পর ভিত্তিস্থাপন কাজের চারিদিকে একের পর এক আতসবাজি পোড়ানো হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.