নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। এখানেই ঘাতকের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের অন্যান্য় সদস্যরা। অতীতের রক্তভেজা মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ‘বিপ্লবী’দের হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বাড়িটির সামনে অংশ। কিন্তু এখন এখানেই ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। অনেকের দাবি, এই বাড়ির নিচেই নাকি ছিল আওয়ামি লিগের ‘আয়নাঘর’! হদিশ মিলেছে বেশ কয়েকটি গোপন কক্ষেরও। সেখানেই তল্লাশিতে নামে দমকলবাহিনীর সদস্যরা। ছিল সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও। তারাই জানিয়েছে, ৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মুজিবের স্মৃতি বিজরিত এই বাড়িতে হামলা চালায় ‘বিপ্লবী’ ছাত্ররা। তারপরই ধ্বংসাবশেষে খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির নিচেই বহুতলের সন্ধান পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে, মাটির নিচে একাধিক তলা রহস্যজনকভাবে জলে পরিপূর্ণ! অনেকেই কৌতূহলী হয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেছিলেন। তিনতলা পর্যন্ত নিচে নামার পর এটি মূলত একটি পার্কিং এরিয়া বলে মনে হয়েছে তাঁদের। অনেক স্থানীয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা দাবি করে, মুজিবের বাড়ির নিচেই নাকি আওয়ামি লিগ আয়নাঘর তৈরি করেছিল। যেখানে গোপনে নির্যাতন চালাত শেখ হাসিনার বাহিনী। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানান তাঁরা।
এরপরই গতকাল রবিবার ওই বাড়ির জলের বের করতে কাজ শুরু করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তখন তারা কিছু জানাননি। এরপর আজ সোমবার সিআইডির আধিকারিকরা জানান, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গুঁড়িয়ে দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি থেকে কিছু হাড়গোড় পাওয়ার গিয়েছে। ধানমন্ডি থানার ওসি আলি আহমেদ মাসুদ বলেন, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে। এখন সেগুলো মানুষের না কি অন্য কোনও প্রাণীর, সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে।” সব মিলিয়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে সুড়ঙ্গ রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশজুড়ে ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি। কোথাও হাতুড়ি মেরে তো কোথাও ক্রেন দিয়ে একের পর এক মূর্তি গুড়িয়ে দেওয়া হয়। কালি লেপে দেওয়া হয় মুজিবের ছবিতে। সেবারও আক্রমণের মুখে ইতিহাসের এক মাইলফলক হয়ে থাকা মুজিবের বাড়ি। ধানমন্ডির এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে অভ্যুত্থানকারী সেনাদের গুলিতে নৃংশসভাবে খুন হয়েছিলেন মুজিবর। তিনি একা নন, প্রাণ গিয়েছিল স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলের। দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও খুন হয়েছিলেন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.