ছবি: প্রতীকী
সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার ও বিদেশি সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। গত দুই সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে যাওয়া ৭৮৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। অর্থাৎ বাংলাদেশে এসেও অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছে শরণার্থীরা। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি-সহ দুই রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর সদস্যরা।
কয়েকদিন আগেই মাদক কারবারের দায়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে ছ’ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট-সহ দুই রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুন-ডাকাতি-ক্যাম্পের তরুণী-যুবতীদের দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসা-সহ বিদেশে পাচার, মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। বলে রাখা ভাল, রাখাইন প্রদেশে বার্মিজ সেনার হামলায় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় রোহিঙ্গারা। তবে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে এতদিন বাংলাদেশে ছিল যে রোহিঙ্গারা, আজ তারাই হয়ে উঠেছে মাথাব্যথার কারণ। যে কারণে আগেই রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে হাসিনা সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম তোলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি দমন কমিশন। বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্প এলাকা থেকে ২টি এলজি, তাজা গুলি ও ৩ রাউন্ড খালি খোসা-সহ দুই রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়। দু’জনের নাম, মহম্মদ সাদ্দাম (২২) এবং আবদুস সালাম (৬০)।
এর মধ্যে গত বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর সময় ১২৮ জনকে আটক করা হয়। ওইদিন রাতে টেকনাফের সাত ক্যাম্পে ১৬ এপিবিএন তল্লাশি চালিয়ে ১৫২ জনকে আটক করে। তার আগের দিন মঙ্গলবার উখিয়া স্টেশন থেকে ৮০ জনকে আটক করে পুলিশ। সোমবার উখিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হন ১৮৪ রোহিঙ্গা। আর একইদিন টেকনাফ থানা পুলিশের অভিযানে আটক হন ৫০ জন। এর আগে গত ২১ মার্চ সোনাদিয়া থেকে ১৪৫ জন এবং ২৫ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে নারী-শিশু-সহ ৪৮ রোহিঙ্গা আটক হন।
বলে রাখা ভাল, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন বেকায়দায় স্থানীয়রা। ক্যাম্পকেন্দ্রিক সেনা কার্যক্রম ও তল্লাশি চৌকি ছিল, তা তুলে নেওয়া উচিত হয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন শতশত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হলেও সন্ধ্যায় অনেকে আর ফিরে আসছেন না। এদের কেউ কেউ মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে দালালের আস্তানায় যাচ্ছেন। বাকি বিশাল একটি অংশ জেলা-সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। আর খুন, অপহরণ, মাদক-সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে অনেক রোহিঙ্গা। আবার রোহিঙ্গাদের আগ্রহে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। মঙ্গলবার উখিয়া থেকে মানবপাচার চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পের বাইরে আসা রোহিঙ্গারা সস্তায় শ্রম বিক্রি করে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে ইচ্ছেমতো বের হয়। তারা উখিয়ার শ্রমবাজার দখল করে নিয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামসুদ দৌজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারপরও কোনও কোনও রোহিঙ্গা আরও স্বচ্ছল জীবনের আশায় বা অপরাধে জড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.