সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদকের দায়ের করা মামলায় বিএনপি (BNP) চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র ও তাঁর পুত্রবধূকে কারাদণ্ডের (Jail) নির্দেশ দিল আদালত। জিয়াপুত্র তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫ বছর ধরে লন্ডনে পলাতক এই দম্পতিকে কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতের সিনিয়র স্পেশ্যাল বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এই রায় দেন।
বুধবার বিকেলে ঢাকা (Dhaka) মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ”বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের যে রায় আদালত দিয়েছেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশে (Bangladesh) যে আইনের শাসন আছে, এটা তারই একটা প্রতিফলন। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করায় দুদক এই মামলা দায়ের করেছিল।” মন্ত্রী বলেন, ”আমি মনে করি, দেশে আইনের শাসন আছে এবং আইনের শাসনে এই মামলার বিচারের দায়িত্ব আদালতের ছিল। সেই দায়িত্ব আদালত সম্পন্ন করেছেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাকে আরও ৩ মাস সাজা ভোগ করতে হবে।”
অপরদিকে, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লক্ষ জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে তাকে আরও ১ মাস কারাবাসে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে তারেক-জোবায়দা দম্পতির গোপন সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৭ জুলাই আদালত এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য বুধবার দিনটি ধার্য করেন। এর আগে গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। ওইদিন তার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল একই আদালত তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সালের ২৬(২)/২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার কাফরুল থানায় এই মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর লন্ডনে (London) পলাতক তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আদালত গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি করে। এরপর তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আদালত।
গত ১৩ এপ্রিল আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। ২১ মে আদালতে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদা সাক্ষ্য দেন। এরপর ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম শেষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মামলাটিতে ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.