ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্চ মাসেই বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ঘুরে দেখেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। আশ্বাস দিয়েছিলেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করার। কিন্তু এবার লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (ইউনাইটেড নেশনন্স রিফিউজি এজেন্সি)। এমনিতেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। এবার কী করবে তারা?
সম্প্রীতি এনিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেয় ইউএনএইচসিআর। বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনের মহম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে এক চিঠির মাধ্যমে এই অনুরোধ জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে নতুন করে প্রবেশ করা প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আশ্রয়ের প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার যেন এই অনুরোধ রাখে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, এসব নতুন রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশে অস্থায়ী তাঁবু গেড়ে থাকতে শুরু করেছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় স্কুল, মসজিদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। নতুন আগত রোহিঙ্গারা প্রায় ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারের সদস্য। যার মধ্যে গত সপ্তাহেই বাংলাদেশে এসেছে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার। অধিকাংশই রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা এবং নাফ নদ পেরিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ইউএনএইচসিআরের অনুরোধের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। মিজানুর বলেন, “আমরা এখনও সেই চিঠির কোনও সাড়া দিইনি। কারণ ক্রমাগত রোহিঙ্গাদের ঢল বাড়তে থাকলে আমাদের দেশে তাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়বে।”
এই মুহূর্তে গৃহযুদ্ধে পুড়ছে মায়ানমার। রাখাইন, মংডু-সহ একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর এখন বিদ্রোহীদের দখলে। অন্যান্য জায়গায় তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে জুন্টা সরকারের। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সেখানে সরকার গঠন করে জুন্টা। গত আড়াই বছর ধরে তারাই চালাচ্ছে দেশ। সেই থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বার বার বিদ্রোহ হয়েছে মায়ানমারে। এর পর জোট বাঁধে তিন বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিএনএলএ (তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি), আরাকান আর্মি ও এমএনডিএএ (মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি)। এই জোটের নাম ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী জোট শুরু করে ‘অপারেশন ১০২৭’। এর জেরে মায়ানমারের বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রবল বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। মায়ানমারের উত্তরের রাজ্য রাখাইনের দখল নিয়ে নেয় আরাকান আর্মি। এই রাখাইনই এখন গৃহযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন শুধু কুতুপালং শিবিরেই বসবাস করছে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীনও এই ‘অনুপ্রবেশকারী’ রোহিঙ্গাদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন। এই সমস্যা সমাধানে জুন্টা সরকারের সঙ্গেও চুক্তি করেন হাসিনা। সেই অনুযায়ী, প্রত্যেক বছর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল জুন্টার। কিন্তু নথিপত্র ও নিয়মের জটিলতায় তা আর হয়নি। বরং যতদিন গিয়েছে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। এখন পদ্মা দিয়েও অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। ‘গণ অভ্যুত্থানে’ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন ক্ষমতায় ইউনুস। এবার তিনি কী পদক্ষেপ করেন সেদিকেই নজর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.