সম্যক খান, মেদিনীপুর: লোধা অধ্যুষিত চারটি গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিল জেলা প্রশাসন। নারায়ণগড়, শালবনি, কেশপুর ও ঘাটালের একটি করে গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, লোধা অধ্যুষিত ১৫টি গ্রামে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানীয় জল সরবরাহেরও ব্যবস্থা করা হবে। শুক্রবার জেলা পরিষদ হলে লোধা মহিলাদের নিয়ে গঠিত স্ব-সহায়ক
দলগুলিকে নিয়ে আলোচনা সভায় সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
পিছিয়ে পড়া লোধা সম্প্রদায়ের মন জয় করার চেষ্টা আগেই হয়েছে। বলাই নায়েকের নেতৃত্বাধীন লোধা শবর কল্যাণ সমিতির এক প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে দেখা করে এসেছেন। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী চালু হয়েছে লোধা সেল। এই জেলায় কেবলমাত্র লোধাদেরই জন্য ডোর টু ডোর সার্ভে শুরু হওয়ার মুখে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের মাত্র কয়েকদিন আগেই লোধা মহিলাদের নিয়ে গঠিত স্ব-সহায়ক দলগুলিকে নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। যেখানে লোধাদের কোন কোন প্রকল্পে কী কী সুবিধা রয়েছে, তার উপর বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। জেলা পরিষদ হলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলে ছিলেন খোদ সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলাশাসক রশ্মি কোমল, পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার, সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি, অনগ্রসর কল্যাণ সম্প্রদায়ের প্রকল্প আধিকারিক সুজিত পাল, তফসিলি জাতি ও উপজাতি কর্পোরেশনের ম্যানেজার পার্থ ভৌমিক, লোধা শবর কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা অমূল্য মাইতি।
লোধা মহিলা স্বসহায়ক দলের প্রায় এক হাজার সদস্যা এদিন হাজির ছিলেন ওই আলোচনা সভায়। সেখানে কৃষিক্ষেত্র, প্রাণিপালন, উদ্যান পালন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোধাদের জন্য কী কী সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। লোধাদের স্ব-সহায়ক দলগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দেন তাঁরা। লোধা শবর কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা তথা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদিন একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার চার ব্লকে লোধা অধ্যুষিত চারটি গ্রামকে বেছে নিয়ে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সবথেকে বেশি লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন নারায়ণগড় ব্লকে। লোধাদের সেখানে কয়েক বিঘা জমিও আছে। সেই জমিতে অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজুবাদাম চাষের পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। লোধা গ্রামগুলিতে পানীয় জল সরবরাহের প্রতিও নজর দেওয়া হবে। সবং, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, খড়গপুর দুই, ডেবরা, শালবনি ও পিংলায় ১৫ টি লোধা গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পানীয় জলপ্রকল্প গড়া হবে। কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট কর্মসূচির পাশাপাশি লোধা গ্রামগুলিতে ডোর টু ডোর সমীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। সেই সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখে লোধাদের ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে। সমাজের সবথেকে পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়কে সামনের সারিতে আনার সবরকম প্রয়াস চলছে বলেই দাবি করেছেন অমূল্যবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.