সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: থিমের জঙ্গলে নাকি হারিয়ে গিয়েছে কলকাতার পুজো! সাজ-সজ্জা, জাঁক-জমকের কমতি নেই, তবু কোথাও যেন প্রাণের পরশের অভাবটুকু ঝলমলে দিনকালের গায়ে লেগেই থাকে। এমন অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। কিন্তু কে বলে সে সব সত্যি! শরতের রোদ্দুরই তো বলে দেয় এই সময় সকল মালিন্য মুছে ফেলার। আর তাই থিমের প্রতিমা নয়, ক্যানসার আক্রান্ত এক কিশোরের গড়া প্রতিমাতেই প্রাণপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ৬৬ পল্লির।
[ ২০০০ গ্রামের সোনার গয়নায় সেজে উঠছেন মরিচকোটার উমা ]
বছর চোদ্দর অর্পণ সর্দার ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ঠাকুরপুর ক্যানসার হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। বজবজের বাসিন্দা এই কিশোর রোগ যন্ত্রণাকে সরিয়ে রেখে বরাবরই ভালবাসে মূর্তি গড়তে। হাতের কাজও চমৎকার। বছরভরই অর্পণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ৬৬ পল্লি ক্লাবের সদস্যরা। শুধু পুজোর বাহার নয়, মানবিক এই কাজেই তাঁরা জড়িত। তাই ক্লাবের প্রত্যাশা ছিল, অর্ণবের কাজ সকলের নজরে পড়ুক। প্রায় প্রতিবছরই এই পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হাতে অর্পণের কাজ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্যানসার আক্রান্ত বলে কেউ সহানুভূতি দেখাক, এটা চায় না অর্পণ নিজেও। এ বছর তাই ৬৬ পল্লির জন্য একচালা দুর্গা প্রতিমাই গড়ে দিয়েছে সে। এদিকে কমিটির থিম বহুরূপী। যে সম্প্রদায় বাংলার রাস্তায় রাস্তায় একসময় বিনোদন বিলিয়ে বেড়াত, এখন তারা ব্রাত্য। লুপ্তও বটে। সেই সম্প্রদায়ের বিবর্তনকেই তুলে ধরা হয়েছে এই পুজোয়। সুমি মজুমদার ও শুভদীপ মজুমদারের ভাবনায় সেজে উঠেছে এই পুজো। সেই আঙ্গিকেই প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী অরুণ পাল। তবে এবারের মণ্ডপে থাকছে দু’টি প্রতিমাই। থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যে প্রতিমা তৈরি হয়েছে তা তো থাকলই। তবে উদ্যোক্তাদের সিদ্ধান্ত, সেই সঙ্গে রাখা থাকবে অর্পণের গড়া প্রতিমাও। এমনকী, বিধি মেনে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে কিশোরের হাতে গড়া প্রতিমাটিতেই।
অর্পণের গড়া এই প্রতিমাতেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা
এবছরও এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটির পক্ষ থেকে প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তাঁকে অর্পণের কথা জানানো হয়েছে। অর্পণের হাতে গড়া ছোট্ট লক্ষ্মী প্রতিমাও তুলে দেওয়া হয়েছে মমতার হাতে। প্রতিভাধর কিশোরের কথা জানা মাত্রই তাঁর সুচিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। পাশেই ছিলেন সুব্রত বক্সি। তিনিও অর্পণের চিকিৎসার বন্দোবস্তের আশ্বাস দেন। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যদি অর্পণ আর্ট কলেজে পড়তে চায়, তবে তার যাবতীয় খরচ দেওয়ারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সুব্রত বক্সির সাংসদ তহবিল থেকেই এই অর্থ দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে।
[ দুর্গা মণ্ডপে ‘সবথেকে বড়’ গণেশ, চ্যালেঞ্জ জলপাইগুড়ির ]
উমার আর্শীবাদেই হোক বা চিকিৎসার গুণে, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে অর্পণ। সৃষ্টির প্রকাশ আর অদম্য ইচ্ছেশক্তির জোরেই প্রায় আসাধ্য সাধন করে চলেছে সে। তবে কোনওরকম সহানুভূতির প্রত্যাশা নেই। আমরাও সে কথা বলি না। তবু অর্পণের এই লড়াই যদি কাউকে প্রাণিত করে, তবে পাশে দাঁড়াতে যোগাযোগ করতেই পারেন নিচের নম্বরে-
প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়: ৯৮৩০২৮২২৯৯
সুমিতাভ দত্ত: ৯৮৩১২১৬৫৭৫
আসুন এবারের পুজোটা নাহয় একটু অন্যরকম করে তুলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.