মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: নিজের শরীরের ভিতর প্রাণের অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলেন। দিব্যি উপভোগ করছিলেন মাতৃত্বের স্বাদ। আচমকাই বিপদের হাতছানি। অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রসূতি। মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। তারপর জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত। এরপর তড়িঘড়ি ওই মহিলাকে উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতালে ভরতি করা হয়। শুরু হয় চিকিৎসা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই প্রসূতিরও বাড়ি হাওড়ায়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দিনকয়েক কলকাতার মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার তাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট হাতে আসার পর জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত। দ্রুত তাঁকে পাঠানো হয় উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন কোভিড হাসপাতালে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে প্রসূতির চিকিৎসা শুরু হয়। হাসপাতালে ভরতির কয়েক ঘন্টা পর থেকেই প্রসব বেদনা শুরু হয় তাঁর। চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বুকে আশঙ্কার মেঘ ক্রমশ জমাট বাঁধতে থাকে সন্তান প্রসবে কোনও সমস্যা হবে না তো? তবে সমস্ত আশঙ্কাকে তুড়ি মেরে হঠিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ ওই মহিলা একটি ফুটফুটে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। খুশিতে ভরে ওঠে হাসপাতাল।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল করোনা ধরা পড়ে এক প্রসূতির। তাঁকে ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালে ভরতি করা হয়। শুরু হয় চিকিৎসা। দিনসাতেক পর ২০ এপ্রিল ওই মহিলার প্রসব বেদনা শুরু হয়। চিকিৎসকদের তৎপরতায় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। তারপর হাসপাতালেই ছিলেন মা এবং সদ্যোজাত। আবারও পরীক্ষা করা হয় দু’জনের। তাতেই দু’জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এরপর শুক্রবার দু’জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সত্যিই রাজকীয় বিদায়। হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে লাইনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন হাওড়ার জেলা শাসক মুক্তা আর্য। উপস্থিত রয়েছেন গ্রামীণ এলাকার পুলিশ সুপার সৌম্য রায়, মহকুমা শাসক তুষার সিংলা, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার তৃণমূলের সভাপতি পুলক রায়। এছাড়া রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী-সহ গন্যমান্যরা। হাততালি দিচ্ছেন সকলেই। সঙ্গে আবেগভরা কন্ঠ গেয়ে উঠছে রবীন্দ্র সংগীত, “তরীখানি বাইতে গেলে মাঝে মাঝে তুফান মেলে, মরার আগে মরব না।” সঙ্গে পুষ্পবৃষ্টিও করা হয়। আবারও ওই একই হাসপাতালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন করোনা আক্রান্ত এক প্রসূতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.