সৈকত মাইতি, তমলুক: স্বামীর আত্মহত্যার কথা কাউকে না জানিয়ে পুলিশের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার অভিযোগ। কোলাঘাটে স্ত্রীর মাথা নেড়া করে মারধর করল গ্রামবাসীরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কোলাঘাট (Kolaghat) থানার কাউরচন্ডী এলাকা। দফায় দফায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ ও পালটা জনতার ইটবৃষ্টিতে প্রায় দিনভর উত্তপ্ত গোটা এলাকা। এই ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী-সহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কোলাঘাট থানার কাউরচন্ডী গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত দাস। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে প্রথম পক্ষের স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বহু আগেই কোলাঘাটের আশুরালিতে তাঁর বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপরই পাশের গোবরা গ্রামের সুপর্ণা দাসের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন সুব্রত। তাঁদের চার বছর বয়সি একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। প্রথম দিকে দাম্পত্য জীবন সুখেরই ছিল। তবে পরে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। তার ফলে ফের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুপর্ণাাও ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান। দিনতিনেক আগেই সালিশি সভায় মিটমাট হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতেই ফিরে আসেন সুপর্ণা।
এদিকে, বেশ কয়েকবার ব্যবসা করতে গিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন সুব্রত। তাই দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধ করার আগেই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। বুধবার গভীর রাতে তাঁর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে কোলাঘাট থানার পুলিশ। স্ত্রীর অভিযোগ, বুধবার রাতে তাঁকে সুব্রত মারধর করেন। তারপর সকলের নজর এড়িয়ে গলায় কাপড় জড়িয়ে আত্মহত্যা করে। সুপর্ণার দাবি, রাতে গ্রামের সকলকে ডাকলেও কেউ আসেননি। তাই বাধ্য হয়ে বাপের বাড়িতে খবর দেন তিনি। বাড়ি থেকে ছুটে আসেন সুপর্ণার বাবা, মা ও বোন। আর তাঁদের উপস্থিতিতেই কোলাঘাট থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে।
সকালে একথা জানতে পেরে সুপর্ণার উপর চড়াও হন এলাকার মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, আত্মহত্যা নয়। খুন করা হয়েছে সুব্রতকে। এই অভিযোগে সুপর্ণাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সকলের সামনে তাঁর মাথাও নেড়া করে দেওয়া হয়। সুপর্ণা এবং তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনকে দুর্গা মণ্ডপে আটকে রেখে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় কোলাঘাট থানার পুলিশ। পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। ১ জন সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুরুতর জখম হন। ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী বিজন সামন্ত-সহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.