ছবি: প্রতীকী
দীপঙ্কর মণ্ডল: হাথরাসের মর্মান্তিক ঘটনা দগদগে ঘায়ের মত যন্ত্রণা দিচ্ছে গোটা দেশকে। তার মাঝে পশ্চিমবঙ্গের এক শিক্ষকের চূড়ান্ত অসভ্যতার খবর প্রকাশ্যে। অভিযোগ, ছাত্রীকে লাগাতার যৌন হেনস্তা করেছেন ওই শিক্ষক। পরীক্ষার সময় পাশে বসে ছবি তুলেছেন। নানা অছিলায় ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করেছেন। ফলস্বরূপ মেয়েটি পাস করতে পারেননি। প্রবল মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছে তাঁকে। পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা, মেয়েটা না আত্মহত্যা করে বসে! ইতিমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।
পশ্চিম বর্ধমানের নজরুল সেন্টেনারি পলিটেকনিক কলেজ (Nazrul Centenary Polytechnic)। সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও ইন্সট্রুমেন্টেশন বিষয়ে এখানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। ২০১৮ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভরতি হন ওই ছাত্রী। শুরু থেকেই তাঁকে টার্গেট করেন ওই কলেজের ‘গুণধর’ শিক্ষক অভিষেক বেরা। ছাত্রী জানিয়েছেন, “কলেজে নানা অছিলায় আমাকে স্পর্শ করেন স্যর। খুব খারাপ ভাবে তাকান। যৌনতার কথা বলেন। শুরুতে আমি হস্টেলে থাকতাম। রাতে একদিন ফোন করে প্রেমের প্রস্তাব দেন। দিদিদের পরামর্শে স্যারের নম্বর আমি ব্লক করে দিই। ভয়ে আমি হস্টেল ছেড়ে মেসে থাকতে শুরু করি।” কিন্তু যৌন হেনস্তা বন্ধ হয়নি। সেমিস্টার পরীক্ষায় শিক্ষক অভিষেক বেরা অসভ্যতা করতে থাকেন। নিজের ক্ষমতা জাহির করে ওই ছাত্রীকে লাস্ট বেঞ্চে বসতে বাধ্য করতেন। পরীক্ষা চলাকালীন চটুল কথা বলতেন। এমনকি তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রীর পাশে বসে নানা অ্যাঙ্গেলে মোবাইলে ছবিও তোলেন ওই শিক্ষক।ছাত্রীর কথায়, “কলেজে আমি সবসময় আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকতাম। পরীক্ষার সময় স্যার আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অথবা পাশে বসে পড়তেন। ভয় এবং অস্বস্তিতে আমি লিখতে পারতাম না। প্রথম এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে পাশ করে যাই। কিন্তু তৃতীয় সেমিস্টারে আর পাশ করতে পারলাম না। আমার বাবা-মা কে প্রথমে কিছু জানাইনি। পরে যখন জানালাম তাঁদের পরামর্শে কলেজের অফিসার ইনচার্জকে লিখিত অভিযোগ করেছি।”
নজরুল সেন্টেনারি পলিটেকনিকের অফিসার ইনচার্জ ফারুক আলি ফোন না তোলায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তবে সেই কমিটি এখনও যৌন হেনস্থায় অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি অভিযুক্তকে ডেকে জেরাও করা হয়নি। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত অভিষেক বেরা ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে জানিয়েছেন, “ওই ছাত্রী নিয়মিত কলেজে আসত না। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি নয়। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।” কিন্তু কেন একজন সাধারণ ছাত্রী শিক্ষককে ফাঁসাবেন? এর উত্তর দিতে পারেননি অভিষেক বেরা। কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, “নির্ভয়া ঘটনার পর আমাদের দেশে যৌন হেনস্থার অভিযোগ পেলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হয়। ছাত্রীর অভিযোগ পাওয়ার পর কলেজের অফিসার ইনচার্জের দ্রুত পুলিশকে জানানো উচিত ছিল।” ৮ অক্টোবর কলেজের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা দপ্তরেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নির্যাতিতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.