ধীমান রায়, কাটোয়া: একটি চায়ের দোকানের উপর নির্ভর করে পেট চলত সংসারের চারজনের। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ। লকডাউন কখন উঠবে তাও সঠিক জানা নেই। চরম হতাশায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী এক যুবক। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের ঘটনায় হতবাক স্থানীয়রা। যুবকের মৃত্যুতে চোখের জলে ভাসছেন তাঁর পরিজনেরা।
দেবরাজ মোদক নামে ওই যুবক কাটোয়া শহরের মার্কেটিং পাড়ার বাসিন্দা। বাবা, মা এবং ভাই ছাড়া আর কেউ নেই বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের। দেবরাজের ভাই সোমরাজ বাইরে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের বাড়ির নিচেই রয়েছে চায়ের দোকান। সেই দোকান চালিয়েই অর্থ উপার্জন করতেন দেবরাজ। বাড়ির নানা খরচখরচাও চালাতেন তিনি। তবে লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান বন্ধ রয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারে অর্থ উপার্জন না করে খরচ জোগানোর মতো টাকা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসার পুঁজি ভেঙে সংসার চালাচ্ছিলেন দেবরাজ। পুঁজি শেষ হলে কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে চিন্তাও করছিলেন তিনি। এই ভাবনাচিন্তায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন দেবরাজ।
পরিবার সূত্রে খবর, অন্যান্য দিনের মতো রবিবার রাতেও খাওয়াদাওয়া করে নিজের ঘরে চলে যান দেবরাজ। তারপর তাঁর বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে ফোনও করেন। সোমবার সকালে অনেক বেলা হয়ে গেলেও ঘুম থেকে ওঠেননি দেবরাজ। তাতেই তাঁর বাড়ির লোকজনদের সন্দেহ হয়। ডাকাডাকি করতে শুরু করেন বাড়ির লোকজনেরা। তবে তাতেও সাড়া মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে ঘরের দরজা ভাঙা হয়। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যান প্রত্যেকেই। দেবরাজকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন দেবরাজের বাবা, মা এবং ভাই। খবর পেয়ে কাটোয়া থানার পুলিশ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দেবরাজের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
দেবরাজের বাবা ভোলানাথবাবু জানান, লকডাউনের পর থেকেই তাঁর ছেলে দোকানের পূঁজি ভেঙে সংসার চালাচ্ছিল। তাই মানসিক অবসাদে ভুগছিল। মৃতের মা রাধারানি মোদক বলেন, “ছেলের চায়ের দোকানের উপরেই ভরসা করে আমাদের সংসার চলত। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ। ব্যবসার পূঁজি ভেঙে সংসার চালাতে হয়েছে। টাকাপয়সা হাতে ছিল না। তাই হতাশায় আমার ছেলে আত্মঘাতী হয়েছে।” একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখছে।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.