অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: কোচিং ক্লাসে না গিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে চেয়েছিল ছেলে। তা নিয়ে বিস্তর বকাবকি করেছিলেন মা। সেই অভিমানে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রোহিত। চার ঘণ্টা তার কোনও খোঁজ মেলেনি। আর যখন ছেলের খোঁজ মিলল, তখন তার মা আর নেই। ছেলে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে সেই আশঙ্কায় গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন মিঠু রায় নামে ওই মহিলা। মঙ্গলবার বিকেলের মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ হাওড়ার চামড়াইলের রায়পাড়া। প্রতিবেশীদের ধারণা, মিঠুদেবী হয়তো ভেবেছিলেন তাঁর বকাবকির কারণেই ছেলে হারিয়ে গিয়েছে। সেই অপরাধবোধ থেকেই এমন কাজ করে বসলেন।
ঘুড়ি ওড়ানোর শখ ছিল রোহিতের। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই মা মিঠুদেবী তাকে বকাবকি করতেন। মঙ্গলবার বিকেলেও একই ঘটনা ঘটে। কোচিংয়ে না গিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে চেয়েছিল সে। মা বারণ করলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় রোহিত। সন্ধ্যা নামার পরও সে বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান মিঠুদেবী ও তাঁর স্বামী কার্তিকবাবু। এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তাঁরা। ছেলে কে না পেয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে দেন মিঠুদেবী। সন্ধে আটটা নাগাদ আমতার পুরাস গ্রামে রোহিতের মামাবাড়ি থেকে ফোন আসে কার্তিকবাবুর কাছে। জানা যায়, রোহিত মামাবাড়িতে গিয়েছে। সেই খুশির খবর দ্রুত স্ত্রীর কাছে দিতে যান কার্তিকবাবু। কিন্তু তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মিঠুদেবীর ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। দড়ি কেটে দ্রুত মিঠুদেবীকে উদ্ধার করে জগদীশপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
চিকিৎসকরা জানান, বেশ কিছুক্ষণ আগে মৃত্যু হয়েছে মিঠুদেবীর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দাসনগর থানার পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুই সন্তানকে নিয়ে দিশাহারা কার্তিক বাবু। এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.