শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: গ্রামের মাতব্বরদের নিদানে এক বিধবা মহিলার দোকান বন্ধ। বয়কট করা হয়েছে ওই বিধবা মহিলার পরিবারকে। তাঁর অপরাধ, তিনি গ্রামের দুজনের মারপিটের ঘটনায় পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন! এরপরই মাতব্বরদের ফতোয়ায় বন্ধ মহিলার একমাত্র রোজাগারের সম্বল মুদি দোকানটি। মাতব্বরদের ফতোয়া, গ্রামের কেউ দোকান থেকে দ্রব্য কিনলেই দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। শুধু তাই নয়, দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকাই। ঘাটালের (Ghatal) হরশংকর গ্রামে এমন মধ্যযুগীয় ঘটনায় শোরগাল পড়ে গিয়েছে। অভিযোগ পেয়েই সোমবার পুলিশ গিয়ে দোকানের তালা ভেঙে দেয়।
ঘাটাল শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দুরে হরশংকর গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা রেবা মণ্ডল। স্বামী প্রয়াত। গ্রামের এক প্রান্তে একটি ছোট মুদি দোকান চালান। ওই দোকানই তাঁর রোজগারের একমাত্র সম্বল। তিনি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, দিন পনের আগে গ্রামেরই দুই প্রতিবেশী মহাদেব মণ্ডল ও সহদেব মণ্ডল জমি জায়গা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে মারপিট করে। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন রেবাদেবী ও তাঁর ছেলে সঞ্জিত মণ্ডল। এক পক্ষের অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে যান ঘাটাল থানার পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারের কাছে ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন রেবাদেবী ও তাঁর ছেলে সঞ্জিত। এতেই চটে লাল গ্রামের মাতব্বররা। গ্রামে ডাকা হয় সালিশি সভা। জারি করা হয় ফতোয়া। রেবাদেবীর মুদি দোকানে তালা মেরে দেওয়া হয় বলে অভিয়োগ।
রেবাদেবী বলেন, ‘‘এই দোকানই আমার একমাত্র রোজাগারের উপায়। গত দশদিন ধরে দোকানটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। সকলে ভয়ে ভয়ে রয়েছে। আমরা ঘাটাল থানা, বিডিও ও মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ ফলে খুব সংকটে পড়ে গিয়েছেন রেবাদেবী। কী বলছেন মাতব্বররা? অভিযুক্ত মাতব্বর গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘‘ওঁরা গ্রামের কথা শোনেনি বলেই গ্রাম থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা দোকান বন্ধ করিনি। আমরা পাঁচহাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেছি। আমরা বলেছি কেউ যদি মালপত্র কেনে বা দোকানের সামনে বসে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।’’ তার জন্য নজরদারিও চলছে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.