ধীমান রায়, কাটোয়া: চোখের নিমেষে বদলে গিয়েছিলেন। নিজেকে বন্ধ করে ফেলেছিলেন একটা ঘরে। ১৪ বছর পর পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার সেই যুবক দেখলেন সূর্য।
পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাসিন্দা শিবু বারুই। কোনওদিনই কোনও সমস্যা ছিল না। বছর ১৪ আগে কাজ হারানোর পর আচমকাই নিজেকে বন্দি করে ফেলেন শিবু। তবে শোনা যায়, নিজেকে বন্দি করার পিছনে ছিল প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদও। সেই থেকে এতগুলো বছর বদ্ধঘরে কেটে গিয়েছে। শত চেষ্টা করেও তাঁকে সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখাতে পারেননি কেউ। ঘরের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া থেকে মল-মূত্র ত্যাগ, সবটাই করতেন তিনি। নিজে যেমন বেরতেন না তেমন কেউ সেখানে যান, তাও না পসন্দ ছিল।
ওই যুবকের মা কমলাদেবী জানান, “আর পাঁচজনের মতোই স্বাভাবিক ছিল শিবু। একটি দোকানে কাজ করত। কিন্তু ১৪ বছর আগে হঠাৎ কেমন বদলে যায়। ঘর থেকে আর কোনওমতেই বেরতে চায় না। কারও সঙ্গে কথা বলা পছন্দ করে না। তার ঘরে কেউ ঢুকলেই বিরক্ত হয়। বদ্ধ ঘরের তক্তার নিচে থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ হয়ে ওঠে শিবুর কাছে।”
বারুই পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস কমলাদেবীর পুত্রবধূ অর্থাৎ শিবুর বৌদি অঞ্জু বারুই। তিনি পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। অঞ্জুদেবী বলেন, “আমার দেওর স্বাভাবিকই ছিল। একটা দোকানে কাজ করত। পরে ওই দোকানের মালিক কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেন। তারপর থেকেই বাড়ি থেকে বের হতে চাইত না। ঘরবন্দি হয়ে গেল।” যদিও এর কারণ প্রেমিকার বিরহ হতে পারে বলেও দাবি অঞ্জুদেবীর। তাঁর কথায়, “ওর কাছে একটি বাক্স থাকত। ওই বাক্সের মধ্যে একটি মেয়ের ছবি দেখেছিলাম। কোনও প্রেমঘটিত কারণ নাকি কাজ চলে যাওয়ার হতাশা থেকে এমন হয়ে গেল তা ঠিক জানি না।”
অসাধ্য সাধন করেছেন নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তা সুমন্ত আইচ। নিজের উদ্যোগে শিবুকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছেন নেশামুক্তি কেন্দ্র। দীর্ঘদিন পর কাটা হয়েছে চুল, নখ। স্নান করিয়ে যেন এক অন্য শিবুকে জন্ম দিয়েছেন সুমন্তবাবু। শিবুকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোই এখন লক্ষ্য তাঁর। নতুন করে ছেলে নিজের কাছে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন গুসকরার বৃদ্ধা মা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.