সম্যক খান ও সুনীপা চক্রবর্তী: বাঘের দোসর হাতি! দক্ষিণরায়ের আগমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে লালগড়ে। কার্যত গৃহবন্দি স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে আবার লালগড় সদর লাগোয়া পডিহার জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে ৯টি হাতি। ফসল নষ্টের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের। এদিকে, লালগড়ের সীমানা ছাড়িয়ে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে শালবনিতেও। লালগড়ের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে বন দপ্তর। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া জঙ্গলের রাস্তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
[লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার! বন দপ্তরের ক্যামেরায় অবিশ্বাস্য ছবি]
সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের খ্যাতি তো জগৎজোড়া। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় কিংবা শালবনির জঙ্গলে কম্মিনকালেও বাঘের দেখা মেলেনি। লালগড়ের মধুপুরের কাছে মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে বাঘের দেখা দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামে বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর মৃত্যুতে বাড়ছিল আতঙ্ক। শেষপর্যন্ত, বিষয়টি যাচাই করতে রাতারাতি জঙ্গলে সাতটি ক্যামেরায় বসায় বন দপ্তর। আর তাতেই ঘটল মিরাকেল! শনিবার ভোরে সাত নম্বর ক্যামেরায় ধরা পড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। লালগড়ে জঙ্গলে দক্ষিণরায়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন বন কর্মীরা। শোরগোল পড়ে গোটা রাজ্যে। আপাতত জাল পেতে বাঘটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আতঙ্কে গৃহবন্দি স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও বনকর্মীদের অনুমান, লালগড়ের জঙ্গলে যে বাঘটিকে দেখা গিয়েছে, সেটি সুন্দরবনের বাঘের মতো মানুষখেকো নয়। আর এই আতঙ্কে এই আবহেই এবার হাতির দলও ঢুকে পড়ল লালগড়ে। বন দপ্তর সূত্রে খবর, শনিবার রাতে লালগড় সদর লাগোয়া পুডিহার জঙ্গলে ঢুকেছে ৯টি হাতি। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে একটি বাড়ি পাঁচিলও ভেঙেছে হাতির দল। এমনিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে হাতির হানা নতুন কিছু নয়। কিন্তু, বাঘের আতঙ্কে গোটা বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। বাঘের ভয়ে এখন ভুলেও জঙ্গলের পথে পা বাড়াচ্ছেন না গ্রামবাসীরা। তার উপর যদি লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ে, তাহলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানিয়েছেন, হাতিগুলিকে গভীর জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
[মানুষ খেকো নয় লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, খাঁচা পেতে অপেক্ষায় বনকর্মীরা]
এদিকে আবার বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে শালবনিতেও। একটু অদ্ভুত আকারের কোনও ছাপ লক্ষ্য করলেই তা বাঘের পায়ের ছাপ ভেবে আতঙ্কে ভুগছেন লালগড়ের সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা। এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বন দপ্তর। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গ্রামবাসীদের জঙ্গলের পথ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চলছে সতর্কতামূলক প্রচারও। লালগড়ের ঝিটকা জঙ্গলের সঙ্গে শালবনির অভয়ার জঙ্গল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। শালবনির মধুপুর থেকে লালগড়ের ঝিটকা, খাসজঙ্গল, রামগড়ের বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকা আছে। জঙ্গলপথ দিয়ে গেলে কোনটা শালবনি ও কোনটা লালগড় তা বোঝার উপায় নেই। ঘটনাচক্রে যে লালগড়ে জঙ্গলে বাঘের ছবি ধরা পড়েছিল, সেদিনই শালবনীর খড়িকাশুলিতে ধানজমির উপর একটি বড় পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামবাসীরা। মুখে মুখে রটে যায়, সেটি নাকি বাঘের পায়ে ছাপ!
ছবি: নিতাই রক্ষিত
[ফের সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে গন্ডারের মৃত্যু, জলদাপাড়ায় উদ্বেগ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.