সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একশ দিনের প্রকল্পে কাজ করেন জব কার্ড পাওয়া শ্রমিকরা। কিন্তু তাঁদের মজুরি ঢোকে অন্য অ্যাকাউন্টে। আজব কাণ্ড পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের বীরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের যৌথ পরিচালিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীন কর্মসংস্থান কর্মসূচি বা ১০০ দিনের প্রকল্পে এমনই বেনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান মৃত্যুঞ্জয় রজককে কাঠগড়ায় তুলে বিডিও’র কাছে নালিশ করেছেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস ও বিজেপি সদস্যরা। বাঘমুন্ডি পঞ্চায়েত সমিতির গেরুয়া শিবিরের দুই কর্মাধ্যক্ষও রয়েছেন অভিযোগকারীর তালিকায়। তাঁদের অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরে।
বীরগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকদের জব কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানের গাফিলতি রয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বাঘমুন্ডির বিডিও তদন্তের নির্দেশ দেন। বিডিও উৎপল দাস মোহরী বলেন, “একশ দিনের কাজের প্রকল্পের অ্যাসিন্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার এই ঘটনার তদন্ত করছেন। তাঁকে দ্রুত রির্পোট দিতে বলা হয়েছে।” ১০০ দিনের কাজ নিয়ে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এমন গুরুতর অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান মৃত্যুঞ্জয় রজক।
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের এই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট দশটি আসন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল পাঁচটি, কংগ্রেস একটি ও বিজেপি চারটি। ফলে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের প্রতিনিধি হলেও উপপ্রধান হন কংগ্রেস প্রতিনিধি রিনা গোপ। প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগপত্রে তিনিও স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগ, প্রায় ৪ হাজার জব কার্ড হোল্ডারের মধ্যে ২৫ শতাংশ জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টেই তাঁদের কাজের মজুরি ঢোকে না। ওই শ্রমিকদের নামে অন্য অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়া ‘বাংলা আবাস যোজনা’র শ্রম দিবসের টাকা উপভোক্তার বদলে ঢুকছে ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে। বিধি মেনে টেন্ডার হচ্ছে না, পঞ্চায়েত প্রধান ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার ও তাঁদের আত্মীয়দের সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও আছে।
অভিযোগকারী বিজেপির সুদন কৈবর্ত্য ও কংগ্রেসের উপপ্রধান রিনা গোপের বক্তব্য, “একশ দিনের প্রকল্পে কাজ করছেন একজন। টাকা ঢুকছে অন্য অ্যাকাউন্টে। একাধিক প্রকল্পে এইভাবে বেনিয়ম করছেন প্রধান।” এই গ্রাম পঞ্চায়েতের জিলিং গ্রামের সালিম মোমিন ও তাঁর স্ত্রী রবিলা বিবি তাঁদের বাংলা
আবাস যোজানার ঘর নির্মাণে ১০০ দিনের কাজ করেন। কিন্তু মজুরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। বাংলা আবাস যোজনার আরেক উপভোক্তা হুড়ুমদা গ্রামের যোগেশ্বর মাহাতো বাড়ি নির্মানে একশ দিনের প্রকল্পে কাজ করেও মজুরি পাননি। এসব নিদর্শন তুলে ধরা হলে প্রধান বলেন, “এমন ঘটনা হয় নাকি? বিরোধীরা ওইরকম অভিযোগ করেই থাকেন।”
ছবি: সুনীতা সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.