চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: রেল মন্ত্রকের তরফে দেশের সাতটি রেল ইঞ্জিন কারখানাকে বিলগ্নিকরণের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা সমর্থন করে শ্রমিকদের অসন্তোষের মুখে পড়লেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সংসদের অধিবেশন চলাকালীন একরাতের জন্য আসানসোল গিয়েছিলেন সাংসদ। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা নিয়ে রেল মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সায় দিয়ে বলেন, ‘রেল ইঞ্জিন কারখানাকে বিলগ্নিকরণের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার পেছনে সুস্পষ্ট নীতি ও স্বচ্ছ ভাবনা রয়েছে সরকারের। পিপিপি মডেল এখন দুনিয়াজুড়ে জনপ্রিয়। বিলগ্নিকরণ মানেই কিন্তু কারখানা বন্ধ করে দেওয়া নয়।’
তাঁর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শ্রমিক মহলে৷ অসন্তষ্ট রাজনৈতিক মহলের একাংশও। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘পিপিপি মডেলেই তো কেন্দ্রের সরকার চলছে। কিছু শিল্পপতিদের টাকায় প্রধানমন্ত্রী, অন্য মন্ত্রী ও সরকার চলছে। সেই শিল্পপতিদের সুযোগ পাইয়ে দিতে পাবলিক সেক্টরগুলিকে পিপিপি মডেলের আওতায় আনা হবে,তাতে আশ্চর্যের কী আছে?’
মেয়রের আরও হুঁশিয়ারি, দুর্নীতি করার জন্য চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানাকে যে বিলগ্নিকরণের চেষ্টা হচ্ছে, তার তীব্র বিরোধিতায় নামবে তৃণমূল। সেভ সিএলডব্লু জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘সাংসদের কথায় আমরা আহত হয়েছি। এই আন্দোলনে সাংসদকে পাশে পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি নিজেই বিলগ্নিকরণকেই সমর্থন করছেন।’ তাই জোরদার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।
রেল মন্ত্রকের তরফে ১০০ দিনের অ্যাকশন প্ল্যান সংক্রান্ত একটি চিঠি চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় পৌঁছায় ১৮ জুন। সেই চিঠিতে রেলের সাতটি প্রোডাকশন ইউনিটকে কর্পোরেট করার ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিল মন্ত্রক৷ এই প্রস্তাবের বিরোধিতায় নেমেছেন শ্রমিকরা। বাজেটে রেলকে ‘পিপিপি’ মডেল বা ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’-এর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ জরাগ্রস্ত ভারতীয় রেলের খোলনলচে পালটাতে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী৷
নির্মলার সুরেই বাবুল সুপ্রিয় পিপিপি মডেলের পক্ষে সায় দিয়েছেন। বাবুলের মতে, কারখানাকে কর্পোরেট করতে এই মডেলই এখন সেরা। তাই তিনি সাধারণ শ্রমিকদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ, ‘রাজনীতির জন্য ইউনিয়নবাজি চলবে, আপনারা এই ফাঁদে পা দেবেন না।’ সাংসদের এই যুক্তি মানতে নারাজ সিএলডব্লুর শ্রমিকরা। স্টাফ কাউন্সিলের সদস্য তথা আইনটিইউসি নেতা নেপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘বিএসএনএলকেও তো এই সরকার পিপিপি মডেলে নিয়ে গেছে। তারপরেই তাহলে সংস্থাটি কেন বন্ধ হতে চলেছে?’ আসলে পিপিপি মডেল মানেই কারখানা বন্ধের আশঙ্কা করছেন শ্রমিকরা। এপ্রসঙ্গে বিরোধীরা হিন্দুস্তান কেবলস, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের উদাহরণও তুলে ধরেছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.