রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: মাতৃস্নেহ এমনই এক বস্তু যার কাছে সব মিথ্যে। মায়ের কাছে আগে সন্তান। তারপর গোটা পৃথিবী। একথা ঠিক অনেক সময় স্নেহ চিরাচরিত রীতির কাছে হার মানে। সমাজের কাছে হাত-পা বাঁধা থাকে মায়ের। কিন্তু অপত্য স্নেহ এমন বিষম বস্তু যা অনেক সময় বছরের পর বছর ধরে চলে আসা রীতিকে তোয়াক্কা করে না। আলিপুরদুয়ারের এক হস্তিনী সম্প্রতি এই প্রমাণ দিয়েও দিয়েছে।
[ আরও পড়ুন: তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন, তল্লাশির নামে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্তর বাড়িতে তাণ্ডব পুলিশের ]
শনিবার ভোর রাতে বীরপাড়ার তুলসিপাড়া চা-বাগানের ৭ নম্বর সেকশনের জলাধারে পড়ে যায় একটি হস্তিশাবক। বয়স তার মাত্র ২ মাস। নিতান্তই বাচ্চা সে। তাই টালমাটাল পায়ে মায়ের সঙ্গে তাল রাখতে পারেনি। অন্ধকারে হয়তো খেই হারিয়েই পড়ে যায় জলাধারে। শাবক পড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতচকিত হয়ে যায় মা। অনেক চেষ্টা করেও জল থেকে মা তুলতে পারেনি তাকে। ঠায় সন্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল রাতভর।
সকালে এই দৃশ্য দেখতে পান স্থানীয়রা। দ্রত খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরে। হস্তিশাবককে উদ্ধার করার জন্য জেসিবি মেশিন নিয়ে আসা হয়। মেশিন দিয়ে জলাধারের একদিক ভেঙে সেটিকে জলশূন্য করা হয়। এরপর শুকনো জলাধার থেকে উদ্ধার করা হয় হস্তিশাবককে। উদ্ধার হয়েই সে ফিরে যায় মায়ের কাছে। এলাকাটি জলপাইগুড়ি বনদপ্তরের দলগাঁও ফরেস্ট রেঞ্জের অধীন। রেঞ্জার রাজীব দে বলেন, শাবকটিকে তার মা হাতি ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে আর চিন্তার কিছু নেই।
[ আরও পড়ুন: কাটমানি নিয়েছে প্রধান, অভিযোগ করে প্রহৃত কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য ]
ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চা-বাগান এলাকায়। হস্তিশাবক উদ্ধার হওয়ার পর উত্তেজনার বশেই তাকে ছুঁয়ে দেয় এলাকার মানুষ। সাধারণত এমন হাতিদের আর ফিরিয়ে নেয় না তার দল। মানুষের ছোঁয়া লাগা মানেই গজসমাজে সে ব্রাত্য। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গেল ব্যতিক্রম। শাবক উদ্ধারের সময় গোটা ঘটনাটি সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছিল মা। উদ্ধারের সময় জেসিবি মেশিনটিকে উটকো বিপদ ভেবে আক্রমণ করে সে। কিন্তু এই বিষম লড়াই বেশিক্ষণ চলেনি। তবে উদ্ধারকারীদের আক্রমণ করেনি সে। তার উপর যখন শাবক মায়ের কাছে ফিরে গেল, তাকে নিয়েই জঙ্গলের পথে হাঁটা লাগাল মা। মাতৃস্নেহ তোয়াক্কা করল না জঙ্গলের নিয়মের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.