সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কাপড়ের স্টলের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সেখানে বিক্রি হচ্ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেখানকার পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, বিজেপি বিধায়কের হুঁশিয়ারির পরই দুর্গাপুরের মেলা কমিটি দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল। আপাতত বন্ধ সেই দোকান।
গত ৬ ডিসেম্বর থেকে রাজীব গান্ধী স্মারক ময়দানে শুরু হয়েছে ‘দুর্গাপুর উৎসব’। চলবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলার উদ্যোক্তা দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স। মেলায় চলছে নামীদামি শিল্পীদের সঙ্গীতানুষ্ঠান। বসেছে কয়েকশো স্টল। তার মধ্যে একটি কাপড়ের স্টলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ব্যানার দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই দোকানে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন না। পূর্বস্থলীর এক ব্যবসায়ী এই স্টল দিয়েছেন। বিক্রি হচ্ছিল ঢাকাই জামদানি, মসলিন ও রাজশাহি সিল্ক, তাঁত-সহ বাংলাদেশের নানা রকমের শাড়ি। ৭ ডিসেম্বর, সন্ধ্যাবেলা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের তা নজরে পড়তেই প্রতিবাদের সরব হন অনেকে। কেন বাংলাদেশি বস্ত্র বিক্রি হচ্ছে, কেন তা বয়কট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা – এই প্রশ্ন ওঠে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
রবিবার বাংলাদেশে অশান্তির প্রতিবাদে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের একটি মিছিল থেকে ওই দোকান নিয়ে বিতর্ক উসকে দেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনি বলেন, ‘‘এই মেলা বকলমে তৃণমূল পরিচালনা করে। তাদের মদত ছাড়া এই দোকান বসতে পারে না। রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে বলব অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। না হলে বিজেপি ওই দোকানে গিয়ে ভাঙচুর চালাবে। প্রতিবাদ করবে।’’ দোকানের ম্যানেজার শামসুর রহমানের দাবি, ‘‘আমাদের পূর্বস্থলীতে বাড়ি। আমরা দীর্ঘদিন এখানে বসবাস করছি। আধার কার্ড, প্যান কার্ড – সবই আছে এই দেশের। দু পয়সা রোজগারের জন্য মেলায় আসি। মালিকের কথামতো আমরা বাংলাদেশের পতাকা দেওয়া ব্যানার লাগিয়েছিলাম। এখানকার লোকজন বলতেই সেটা আমরা আগেই খুলে দিয়েছি। এখন মেলা কমিটি দোকান বন্ধ করতে বলছে। তাই দোকানও রবিবার দুপুর থেকেই বন্ধ করে দিলাম।’’
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এত ভালো একটা দুর্গাপুর উৎসব চলছে, সেখানে বিরোধীরা চক্রান্ত করছে। এখানে কোনও অশান্তি হতে দেব না। একটি দোকান নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ার পরই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অযথা ধর্ম নিয়ে এই রাজ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দেব না বিজেপিকে।’’ দুর্গাপুর উৎসব কমিটির সম্পাদক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘প্রচারের জন্য হয়তো ব্যানার লাগিয়েছিল। ওরা কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নন। আমাদের দেশের নাগরিক। বিতর্ক হওয়ায় দোকান বন্ধ করা হয়েছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.