টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ব্যবধান মাত্র পনেরো মিনিট। তাতেই কুড়ুলের ঘায়ে বেঘোরে মৃত্যু হয়েছে বাঁকুড়ার মানকানালি পঞ্চায়েতের রায়বাঁধ গ্রামের দুই প্রতিবেশী অজিত চৌধুরি ও লিচু রায়ের। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দু’জনের এহেন চরম পরিণতিতে কার্যত হতবাক মৃত দু’জনের পরিবারের সদস্যরা। সুস্থ স্বাস্থ্যের আশায় বছর পঞ্চান্নের বনকর্মী অজিতবাবুর প্রাতঃভ্রমণে বেরনোই কাল হল বলে মনে করছেন পরিবারের সদস্যরা। একই মতো পড়শি লিচু রায়ের স্বজনদেরও।
সাতসকালে স্থানীয় পুকুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বছর ছেচল্লিশের এই বিধবা মহিলা। অজিতবাবুর কেনা জমি জবর দখল করে রাখার জন্য প্রায়ই তাঁর সঙ্গে বচসা হত অভিযুক্ত অরূপ চৌধুরির। আবার সেই জমি থেকে জ্বালানির জোগানে কাঠ কাটার কারণে পড়শি বিধবা লিচু রায়ের সঙ্গেও অরূপের ঝগড়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তবে সেই বাদানুবাদ থেকে অরূপ যে দু’জনকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে প্রাণে মেরে ফেলবে, একথা স্বপ্নেও ভাবেননি প্রতিবেশী ও দুই মৃতের পরিবার। অজিতবাবুর বড় ছেলে হৃদয় চৌধুরির দাবি অভিযুক্ত অরূপকে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। মৃত লিচু দেবীর ছেলে শক্তিপদ রায়ের গলাতেও একই সুর শোনা গেল।
হৃদয়বাবু জানান, গত দিন পনেরো আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত তাঁর বাবা চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসকরা তাঁকে প্রাতঃভ্রমণের পরামর্শ দেওয়ায় সোমবার বাবাকে সঙ্গে নিয়েই তিনিও প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। মাত্র মিনিট পনেরো আগে বাবাকে বাড়ির অদূরে বন্ধ দোকানের সামনে ছেড়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তারপরেই এই দুঃসংবাদ পান। খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে মাঝ রাস্তায় দেখেন বাবার রক্তাক্ত দেহ। কিছুটা দূরেই পড়েছিল প্রতিবেশী কাকিমা লিচু রায়ের মৃতদেহ। বাড়ি থেকে এই দুই দেহের দূরত্ব বড়জোড় দেড়শো মিটার। সারা দেহ ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত। শরীরের ক্ষত থেকে ফিনকি দিয়ে রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। দুই পরিবারেই স্বজন হারানো কান্নার রোল। স্বামীর এহেন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অজিতবাবুর স্ত্রী। ঘটনার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন বছর পঞ্চাশের ওই বৃদ্ধা। তাঁকে সামলাতে ব্যস্ত বড়ছেলে হৃদয়বাবুর স্ত্রী বনশ্রী চৌধুরি। ঘটনার পর থেকে শাশুড়ির মাথায় জল ঢেলে হাত পাখায় বাতাস করেই চলেছেন তিনি। শোকের ছায়া নেমেছে পাশাপাশি এই দুই পরিবারে বাড়িতে। শাশুড়ির শুশ্রুষা করতে করতে বনশ্রীদেবী জানান, দিন কয়েক আগেই আরেক প্রতিবেশীর ছাগল বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার অপরাধে ওই ছাগলটিকে গলা টিপে মেরে ফেলেছিল এদিনের ঘটনায় অভিযুক্ত এই অরূপ চৌধুরিই। ঘটনার পরেই গ্রামবাসীরা চড়াও হন অভিযুক্তের বাড়িতে।
গ্রামবাসীদের মার খেয়ে আহত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ভরতি অরূপের দুই ভাই। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে অরূপের এক ভাই মিলন চৌধুরি বলেন, “দাদা বরাবরই বদমেজাজি। সোমবার সকাল থেকেই কুড়ুল হাতে রণচণ্ডী মূর্তিতে বাড়িতে পায়চারি করতে করতে আচমকাই বাড়ি থেকে ছুটে বাইরে বেরিয়ে যায়। তারপরই এই কাণ্ড!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.