সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) অচিন্ত্য ঘোষ।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পথ দুর্ঘটনার পর আগুন ধরে যায় চারচাকা গাড়িতে। জাতীয় সড়কে দাউ দাউ করে জ্বলছিল গাড়িটি। ভিতরে চালক-সহ দুজন আটকে। বেরতে পারছেন না। সেই সময় এগিয়ে আসেন অচিন্ত্য। জীবনের পরোয়া না করে গাড়ির কাঁচ ভেঙে কার্যত ভিতরে ঢুকে যান। দগ্ধ অবস্থায় একজনকে বের করেন। চালককেও উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু নিজেও এতটাই দগ্ধ হয়েছিলেন যে আর পারেননি সাহসী ওই পুলিশ আধিকারিক। তাঁকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করেছে রাজ্য পুলিশ। এক লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার ও শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানায় সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে কর্মরত অচিন্ত্য ঘোষকে।
ঘটনার সময় অচিন্ত্য গলসি থানায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সকালে গলসি থানার গলিগ্রামে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে (অধুনা ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক) একটি লোহা বোঝাই ট্রেকার মারুতি গাড়িতে ধাক্কা মারে। তার পর দুটি যানেই আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছন টহলদারিতে থাকা এএসআই অচিন্ত্য ঘোষ ও অন্যান্য পুলিশকর্মীরা। গিয়ে দেখেন দাউদাউ করে জ্বলছে গাড়ি দুটি। ট্রেকারের চালক ও খালাসি পালাতে পারলেও মারুতি গাড়ির দুজন বেরতে পারেননি। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করছিলেন তাঁরা। সম্পর্কে শ্যালক ও ভগ্নীপতি ছিলেন তাঁরা। দেরি না করে অচিন্ত্যবাবু উদ্ধার কাজে নামেন। গাড়ির চালকের পাধের আসনে বসে থাকা আসমত আলি মণ্ডলকে উদ্ধার করেন তিনি। চালকের আসনে ছিলেন আসমতের শ্যালক শেখ রফিকুল আলম। তিনি জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। দুজনেরই বাড়ি খণ্ডঘোষের কেঁউদিয়ায়।
জীবনের পরোয়া না করে দুর্ঘটনাগ্রস্তকে উদ্ধার করে অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন অচিন্ত্যবাবু। তিনিও দগ্ধ হয়েছিলেন সেদিন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তাঁর পদোন্নতি হয়। বর্তমানে রায়না থানায় কর্মরত। সেই দুর্ঘটনার কিছুদিন পর তৎকালীন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় পুরস্কৃত করেছিলেন অচিন্ত্যবাবুকে। কয়েকদিন আগে রাজ্য পুলিশের তরফে সাহসিকতার জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বর্তমান পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘‘কাউকে চোখের সামনে বিপদে পড়তে দেখে পুলিশ কখনওই সরে আসে না। অচিন্ত্য খুবই ভালো কাজ করেছে। ওর ফাইল দেখেছি। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ওকে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে সাহসিকতার পুরস্কার পেয়ে খুশি অচিন্ত্য ঘোষ। তবে এখনও তাঁর আক্ষেপ রয়েছে, আর একজনকে সেদিন বাঁচাতে পারেননি বলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.