সৌরভ মাঝি, বর্ধমান: বছরভর নানা ছোটখাট ঝগড়াঝাঁটি, মন কষাকষি লেগেই থাকে। আবার একটুআধটু ভাললাগাও তৈরি হয়। তবে মধুর বা তিক্ত, যেমন মনোমালিন্যই হোক, একটা দিনে কিন্তু সব মিটে যায়। বাঙালির প্রেম দিবসের পরেরদিন। ওই দিন ফুল, মিষ্টি, উপহারের ডালি সাজিয়ে এ যায় ওর হস্টেলে। ও আসে এর হস্টেলে। এটাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি। সরস্বতী পুজোর পরদিন ছেলে এবং মেয়েদের হস্টেলে তত্ব আদানপ্রদান। এবছরও তা হয়ে গেল নিয়ম মেনে।
সোমবার বেলা খানিক বাড়তেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। পরিপাটি করে তত্ত্ব সাজিয়ে নেওয়া হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮ টি হস্টেল থেকে সেই তত্ত্ব পৌঁছায় ছাত্রী আবাসে। ছাত্রদের সকলের পরনে ছিল হলুদ-সাদা পাঞ্জাবি। তেমনই উলটোদিক থেকে প্রায় সমসংখ্যক ছাত্রী আবাস থেকেও ফুল, মিষ্টি সমেত তত্বের ডালি নিয়ে বয়েজ হস্টেলে পৌঁছে যান স্নাতক, স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর তখন আলো হয়ে আছে হলুদ এবং অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের শাড়িতে। শুধু উপহার বিনিময় তো নয়, এরই ফাঁকে চোখাচোখি, ইশারা। কেউ কেউ আবার একটু আড়াল-আবডাল খুঁজে প্রেয়সীর কানে কানে প্রকাশ করে ফেলছেন মনের কথাটি। সেইসঙ্গে পকেটে লুকিয়ে রাখা এক কুঁড়ি গোলাপ রেখে দিচ্ছেন প্রণয়ীর করকমলে। কেউ বা আগের দিনের তর্কবিতর্ক ভুলে যাঁকে চরম শত্রু মনে বলে ভাবেন, তাঁকেও উপহার দিচ্ছেন মুক্তোছড়ানো হাসি। ব্যাস, তাতেই অন্তত একদিনের জন্য হলেও সন্ধি স্থাপন। কলেজ চত্বর যেন রীতিমতো প্রেমদিবসে পরিণত হয়। এমন দিন কি মিস করলে চলে?
ভিনরাজ্য থেকে ফিরেই চক্ষু চড়কগাছ ছেলের, বাড়িতে উদ্ধার বাবার হাড়গোড়
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পারমিতা জানাচ্ছেন, ‘এমনিতেই আমাদের এখানে তিনদিন ধরে সরস্বতী পূজো হয়। রীতিমতো দুর্গাপুজোর মতো আনন্দ করি। আজকের দিনটা নিয়ম মেনে তত্ব বিনিময় হচ্ছে। এতগুলো হস্টেলে ঘুরতে ঘুরতেই আমাদের বেলা কেটে যায়। আবার বিকেলে ছেলেদের হস্টেল থেকে তত্ত্ব আসবে আমাদের এখানে। এই করেই আজ সারাটা দিন কেটে যায়। নাচগান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।’ এভাবে অলিখিত প্রথায় উপহার বিনিময়ের হাত ধরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর একদিনের জন্য হয়ে ওঠে বন্ধুত্ব আর প্রীতির আঙিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.