অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: মিশন নির্মল বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতার হাত বাড়ালেন এক পল্লিবধূ। ভিক্ষা করে জমানো টাকায় শৌচাগার তৈরি করে নজর কাড়লেন। অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বর্ধনপুর গ্রামে। বাড়িতে জায়গার অভাব, তাই আস্ত রান্নাঘরটিকে শৌচাগারে পরিণত করেছেন আসরাফুন বেওয়া। তাঁর এই কাজে প্রশাসন বা প্রতিবেশীর ধন্য ধন্য জ্ঞানে নির্বিকারই রয়েছেন ওই মহিলা। তাঁর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, “নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে শৌচাগার বানিয়েছি। তাতেও যে এত প্রশংসা পাওয়া যায় আগে জানতাম না।”
জানা গিয়েছে, ভিক্ষা করেই সংসার চলে ওই মহিলার। নিজেও চাইতেন বাড়িতে শৌচাগার থাকুক। তাই ভিক্ষা করে জমানো টাকা দিয়েই শৌচাগারে তৈরির পরিকল্পনা করেন। আসরাফুন বেওয়ার এহেন ইচ্ছার কথা জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল স্থানীয় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী। মিলেজুলেই বানিয়ে ফেললেন শৌচালয়। এই প্রসঙ্গে আসরাফুন বেওয়া বলেন, ‘আমার ব্যাপারে যেমন অনেকে সাহায্য করলেন। তেমন করে না পারলেও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে ও মিশন নির্মল বাংলা সফল করতে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত আমিও বাড়াবো। সকালবেলায় পাড়ায় পাড়ায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা যেভাবে বাঁশি বাজিয়ে আমাকে ভিক্ষের টাকায় শৌচাগার বানাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তেমন ভাবে আমিও করব।’ রানিনগর দু’নম্বর ব্লকের মিশন নির্মল বাংলার নলেজ লিঙ্ক অফিসার পবিত্র রায়।তিনি বলেন, ‘আসরাফুন বেওয়া ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছেন। আমরা তাঁকে পুরস্কৃত করার জন্য জেলায় নাম পাঠাব।’
বলা বাহুল্য, মিশন নির্মল বাংলা সফল করতে পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে ট্রিগারিং চলছে। বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির সচেতনতা প্রকল্প চলছে। এই অবস্থায় ভিক্ষাবৃত্তির উপার্জনে শৌচাগার তৈরি করে নজির গড়েছেন ওই মহিলা। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে ছাড়া তাঁর সংসারে কেউ নেই। রুটিরুজির ব্যবস্থা বলতে ওই ভিক্ষা। ওই অবস্থায় স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মেয়েদের অনবরত শৌচাগার তৈরির আবেদন। অভাবের সংসার প্রথমে নিমরাজি থাকলেও গোষ্ঠীর মহিলাকর্মীদের প্রচেষ্টায় তিনি সম্মতি দেন। সংবাদ মাধ্যম থেকে নির্মল বাংলার উদাহরণ স্বরূপ নানা গল্প শোনানো হত তাঁকে। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসারে কীভাবে শৌচাগার বানাবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। আসরাফুন বেওয়ার সদিচ্ছার কথা শুনে গোষ্ঠীর মহিলারাই এগিয়ে আসেন। ভিক্ষুকের বাড়ির রান্নাঘরটিই শৌচাগারে বদলে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.