ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: জন্ম থেকেই তাঁর দু’হাত নেই। বাবা-মা তাই নাম রেখেছিলেন জগন্নাথ। দু’হাত না থাকলেও আটজনের সংসারের একমাত্র রুটিরোজগারী পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক জগন্নাথ বাউড়ি। তবে প্রতি বছর রথযাত্রার আগেই মনখারাপ হয়ে যায় তাঁর। কারণ, ইচ্ছা হলেও জগন্নাথদেবের রথের রশি টানতে পারেন না তিনি। এটাই তাঁর একমাত্র আক্ষেপ।
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বেলুটি গ্রামের জনমজুর পরিবারের সন্তান জগন্নাথবাবু। জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি। বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তান। দিদির মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেমেয়ের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জগন্নাথবাবু। বাবা লক্ষণ বাউড়ি জনমজুরি করতেন। যদিও জগন্নাথবাবু চাকরি পাওয়ার পর ছেলের ইচ্ছাতেই তিনি জনমজুরি ছাড়েন। স্ত্রী লক্ষী ও মা সুমিত্রা গৃহবধূ। মেয়ে ঋত্বিকা ও ছেলে স্কুলপড়ুয়া।
সুমিত্রাদেবী জানান, তাঁদের একমাত্র পুত্রের জন্মের পর থেকেই দু’হাত ছিল না। তাই তার নাম রাখা হয় জগন্নাথ। কিন্তু অদম্য জেদকে হাতিয়ার করে শারীরিক এবং আর্থিক বাধাকে বারবার তুচ্ছ প্রমাণ করেন জগন্নাথবাবু। নিজের চেষ্টায় ছোট থেকেই পায়ে পেন, পেনসিল ধরে লেখালেখি শুরু করেন। এভাবেই উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি টপকে ২০১০ সালে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি পান। পায়েই এখন চক ডাস্টার ধরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শেখান জগন্নাথ।
প্রথম প্রথম জগন্নাথবাবুকে নিয়ে সংশয় ছিল স্থানীয় অভিভাবকদের। যাঁর দু’হাত নেই তিনি কী করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বোঝাবেন, সে ভাবনা সকলেরই ছিল। স্কুলের জানলায় উঁকি দিয়ে অনেকেই জগন্নাথবাবুর ক্লাস নেওয়া দেখতেন। তবে নিজেকে প্রমাণ করতে সমর্থ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অভিভাবকদের সংশয় কেটেছে। জগন্নাথ বাউড়ির সহকর্মীও মুগ্ধ। ওই স্কুলেরই শিক্ষক উদয় ঘোষ বলেন, “অনেক শিক্ষক শিক্ষিকার থেকেও জগন্নাথবাবু ভাল বোর্ডওয়ার্ক করেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করেও কীভাবে একজন আদর্শ শিক্ষক ও যোগ্য মানুষ হয়ে ওঠা যায়।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.