ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: বাঁশ কেটে তৈরি লাঙলের ফলা। কিংবা মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হওয়া গাছের গুঁড়ি থেকে বানানো দেবী চৌধুরানির ৪২ ফুট লম্বা নৌকা। কোচবিহার রাজ আমলের নারায়ণী মুদ্রা থেকে রাভা-টোটো জনজাতির হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র, শিকার সামগ্রী। গুপ্ত-পাল-সেন-মুঘল যুগের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
[ছুটিতে দিঘার হোটেলের ভাড়া আকাশছোঁয়া, কোন চক্র সক্রিয় জানেন?]
সম্পদের কোনও অভাব নেই। কিন্তু ভিজিটর খাতায় দর্শকের সংখ্যাটা কোনওদিন দশ, তো কোনওদিন আবার পনেরো! গত কয়েক বছরে সংগ্রহশালাকে জনপ্রিয় করতে চেষ্টা কম হয়নি। রেলস্টেশন, বিমানবন্দরে ফ্লেক্স টাঙানো। ট্যুর অপারেটর থেকে হোটেল-গাড়ি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক। সবই হয়েছে। কিন্তু তার পরও দেখা মেলে না পর্যটকদের। উৎসাহের যথেষ্টই ঘাটতি রয়েছে সাধারণেরও। এবার নয়া উদ্যোগ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। উত্তরের ইতিহাস তুলে ধরতে হাটে-বাজারে ‘ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহশালা’। নতুন বছর থেকেই পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স-সহ উত্তরের জেলায় জেলায় ঘুরবে এই ‘সংগ্রহশালা’।
কিন্তু তা কীভাবে? উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্ষয়কুমার মৈত্র সংগ্রহশালার ইনচার্জ ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, “সংগৃহীত উপাদান সবসময় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তবে যতটা পারা যাবে, সেসব গ্রামে নিয়ে যাব আমরা। কিন্তু আমাদের সংগ্রহশালায় যেসব অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান রয়েছে, সেগুলির ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। কোন উপাদানটি কোন সময়ের কী ইতিহাস বহন করছে, সেখানে তা তুলে ধরা হয়েছে। এই ‘অডিও-ভিজুয়াল মিউজিয়াম’-ই ঘুরবে গ্রাম থেকে শহরে। হাটে-বাজারে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে তাতে দেখানো হবে।” নয়া এই উদ্যোগের দু’টি লক্ষ্য রয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের। প্রথমত, গ্রাম-শহরের সাধারণ মানুষের সামনে উত্তরবঙ্গের কয়েকশো বছরের প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে সংগৃহীত বিভিন্ন উপাদান দেখিয়ে, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে মানুষজনকে সচেতন করা। পাশাপাশি বিভিন্ন টুরিস্ট স্পট, জনবহুল এলাকায় অডিও-ভিডিও ভিস্যুয়াল প্রচারের ফলে পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম নিয়ে আকর্ষণ বাড়ানো। এতে সংগ্রহশালায় ভিজিটরের সংখ্যা বাড়তে পারে।
[মাতলার চরে বাঘের পায়ের ছাপ, উৎসাহে ডগমগ সুন্দরবনমুখী পর্যটকরা]
অন্যদিকে, জায়গার অভাবে সংগৃহীত পাঁচশোরও বেশি প্রাচীন সামগ্রী, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ঠাঁই পায়নি সংগ্রহশালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোডাউনে দিনের পর দিন তালাবন্দি হয়ে রয়ে গিয়েছে ‘ইতিহাস’! কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, মিউজিয়ামে জায়গা কম। ফলে সব সামগ্রী গ্যালারিতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মাঝেমধ্যে পালা করে স্টোর রুমে থাকা সামগ্রীগুলি এনে সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত করা হয়। তখন মিউজিয়াম থেকে আবার কিছু সামগ্রী স্টোররুমে নিয়ে রাখতে হয়। মিউজিয়ামের নতুন ভবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
[চেনা মাইথনে এবার অনেক পরিবর্তন, বদল সবুজ দ্বীপেও]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.