Advertisement
Advertisement
Purulia

পুরুলিয়ায় ‘স্পেশাল ২৬’ কায়দায় ডাকাতি কাণ্ডে এবার গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা

ডাকাতির সময় বিজেপি নেতার অবস্থান কোথায় ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

BJP leader arrested in 'Special 26' style robbery case in Purulia
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:April 23, 2025 12:27 pm
  • Updated:April 23, 2025 5:13 pm  

অমিত সিং দেও, মানবাজার: আয়কর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে পুরুলিয়ার কোটশিলায় বিড়ি ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় এবার বিজেপি নেতার যোগ। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ এই তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর মঙ্গলবার ভোরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতওয়ালি থানা  রাজাবাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পুরুলিয়ার বিজেপি নেতাকে। তাঁকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ধৃত বিজেপি নেতার নাম পরাণ মাহাত। বাড়ি কোটশিলা থানার রিগিদ অঞ্চলের রাহান গ্রামে।  জেলা বিজেপির প্রাক্তন সম্পাদক পরাণ মাহাতো বর্তমানে জয়পুর বিধানসভার আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। এই ঘটনায় অন্যতম চক্রী হিসেবে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। আজ, বুধবার ধৃতকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হবে। এই নিয়ে এই ঘটনায় মোট ৯ জন গ্রেপ্তার হল। অন্যদিকে, সোমবার ভোরে রাঁচির কাঁটাটোলি এলাকা থেকে ওসফ ওরফে মাসুম খানকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে তার ৪ দিনের পুলিশ হাজত হয়। ইতিমধ্যেই এই ডাকাতির ঘটনায় প্রথম জেলা পুলিশের হাতে ধৃত সিআরপিএফ জওয়ান-সহ ৭ জনকে ও সোমবার পুরুলিয়া আদালতের বিচারকের নির্দেশে ৬ জনকে পাঁচ দিনের হেফাজতে পায় পুলিশ। এছাড়া ধৃত বাকি এক তরুণীকে টিআই প্যারেডের জন্য ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

Advertisement

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ডাকাতির ঘটনায় অন্যতম মাথা তথা চক্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” গত শনি ও রবিবার ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক সিআরপিএফ জওয়ান-সহ দুই তরুণী মিলিয়ে ৭ জন গ্রেপ্তার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হেফাজতে নিয়ে রাঁচি জেলার বাসিন্দা সিআরপিএফ জওয়ান পরেশ দাস, কপিল দেব মাহাতো, সুরজ কুমার মাহাতো, খুশবু মণ্ডল ও কোটশিলা থানা এলাকার সমীর রায় ওরফে লিচু, মহিম কুমার ও ওইসফ ওরফে মাসুম খানকে জিজ্ঞাসাবাদ
চালানো হচ্ছে। পুরুলিয়া সংশোধনাগারে টিআই প্যারেড করানোর পর তাঁকেও নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় তদন্তকারীরা।

এখনও পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, এই গোটা অপারেশনের মাস্টার মাইন্ড রাঁচির বুন্ডু শহরের বাসিন্দা পারেশ দাস। যিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের জওয়ান। বর্তমানে তিনি ১৪ ব্যাটালিয়নে খুঁটি এলাকায় কর্মরত। তিনি ছুটিতে এসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটান। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের এই অপরাধে অন্যতম সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন বিজেপি নেতা পরাণ। কোটশিলা বাজার থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে ওই পদ্ম নেতার বাড়ি। পার্টির কাজে মোটর বাইকেই সাধারণ ভাবে ঘোরাফেরা করতেন ধৃত বিজেপি নেতা। ফলে এই ডাকাতির ঘটনায় তার মাথা থাকায় ফের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনী-বিজেপির যোগ।

যা নিয়ে তির ছুঁড়েছে তৃণমূল। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত  সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, “ডাকাতির ঘটনায় সিআরপিএফ জওয়ান ও বিজেপি নেতা! অপরাধেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে গেরুয়া নেতার যোগ। দলটার কি অবস্থা এই ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করছে।” যদিও বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শংকর মাহাতো বলেন, “কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানি না। আগামীকাল কোর্টে তোলা হলেই বিস্তারিত জানতে পারব।”

তদন্তে উঠে এসেছে কোটশিলার বামনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহিম কুমারের নাম। অতীতে তিনি বিড়ি পাতার ব্যবসা করতেন। যদিও বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবসায় জড়িত ওই ব্যক্তি। অভিযোগ পরাণ মাহাতো মহিমকে জানায়, এই এলাকায় এমন একজনের বাড়ি চিহ্নিত করতে হবে যার বাড়িতে কোটি, কোটি টাকা আছে। এরপরই মহিম পড়শি বিড়ি ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের বাড়ি চিহ্নিত করে। তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করে। একাজে সহযোগিতা করে ওই থানা এলাকার তহদ্রি গ্রামের বাসিন্দা সমীর রায় ওরফে লিচু। বেশ কয়েক সপ্তাহ জুড়ে ওই বিজেপি নেতার নির্দেশে তারা নানান তথ্য সংগ্রহ করে।

পাশাপশি ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে কয়েকদিন আগে জিএসটি হানা দিয়েছিল সেই তথ্যও তারা জানতে পারে। এরপরেই বিজেপি নেতা পরাণ যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে ঝাড়খণ্ডের ওই দুষ্কৃতী গ্যাংয়ের সদস্যদের। শুধু তাই নয়, বামনিয়া এলাকায় কোটশিলা থানার পুলিশের টহলদারি ভ্যান কোন সময় থাকে বা যাতায়াত করে সেই তথ্যও নেওয়া হয়। এছাড়া কোন পথ ধরে অপারেশন চালিয়ে তারা বেরিয়ে যেতে পারবে তার জন্যও কয়েকদিন ধরে কোটশিলা থেকে ঝাড়খণ্ড যাওয়ার বিভিন্ন পথে তারা বাইক ও চার চাকার গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করে। সমস্ত তথ্য পেয়ে একটি প্রাথমিক নীল নকশা সাজায় ওই বিজেপি নেতা। তার প্ল্যান সহ সব তথ্য তুলে দেওয়া হয় অপরাধের মাস্টারমাইন্ড পরেশ দাসের হাতে। এরপরেই তৈরি হয় ওই ডাকাতির চূড়ান্ত নীল নকশা। আর সেই নকশা অনুযায়ী মহিম এবং সমীর ওরফে লিচু ঘটনার দিন ব্যবসায়ীর বাড়ির অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময় পরাণের অবস্থান কোথায় ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement