সৈকত মাইতি, তমলুক: অশান্তির জেরে কথা বন্ধ ছিল স্বামীর সঙ্গে। তাই মান ভাঙাতে স্বামীর অফিসে পৌঁছে যান স্ত্রী। কিন্তু সেখানে যে এমন বিপত্তি ঘটবে তা কে জানত! পঞ্চায়েত অফিসে বসে স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিলেন স্ত্রী। সেইসময় নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এলাকার স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে অভিযোগ করেন, ‘ভিতরে মধুচক্র চলছে।’ তাঁঁদের অভিযোগ পেয়ে ওই মহিলাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শেষপর্যন্ত বুধবার দুপুরে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ও ছবি দেখিয়ে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যে বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা হল তাঁর, তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন ওই মহিলা।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের ১ ব্লকের গোকুলনগর পঞ্চায়েতের সচিব নীলকমল দাস। তাঁর বাড়ি কোলাঘাটের শান্তিপুরে। বর্তমানে কর্মসূত্রে তিনি নন্দীগ্রামে থাকেন। গত কয়েকদিন স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ফোন ধরছিলেন না। ফলে স্বামীর মান ভাঙাতে মঙ্গলবার তাঁর কর্মস্থলে এসে উপস্থিত হন স্ত্রী। রাস্তায় ভিড় থাকায় গোকুলনগরে পৌঁছতে রাত হয়ে গিয়েছিল তাঁর। রাত ১০টা নাগাদ তিনি গ্রামে পৌঁছন। সেই সময় পঞ্চায়েত অফিসে কাজ করছিলেন নীলকমলবাবু। সেইসময় অফিসের ভিতর স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল দরজা। রাতে পঞ্চায়েত অফিসে আলো জ্বলতে দেখে বিজেপি কর্মীরা উত্তেজনা ছড়ায়। অফিস ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। অভিযোগ করেন, তৃণমূলের মদতে পঞ্চায়েত অফিসে মধুচক্র চলছে। উত্তেজনা সামাল দিতে পুলিশ এসে মহিলাকে থানায়া নিয়ে যায়।
মহিলার অভিযোগ, সারারাত তাঁকে নন্দীগ্রাম থানায় বসিয়ে রাখা হয়। সকালে বিয়ের রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট ও স্বামী-স্ত্রীর ছবি দেখে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার একমিনিটের মধ্যে স্ত্রীকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন নীলকমলবাবু। জানিয়েছিলেন, “এখানে সমস্যা আছে। বাইরে যাও। বাইরে গিয়ে কথা বলছি।” তারমধ্যেই বিজেপি কর্মীরা তাণ্ডব শুরু করে বলে অভিযোগ। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে তৃণমূল-বিজেপির হাতাহাতি বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এদিকে সেই রাতের আতঙ্ক এখনও তাড়া করছে ওই মহিলাকে। মধুচক্র চালানোর অপবাদ ভুলতে পারছেন না তিনি। ওই মহিলার কথায়, “আমি রাজনীতির শিকার হলাম। যাঁরা এই ঘটনা ঘটাল তাঁরা আরেকটু সতর্ক হতে পারত। আমার কথাই কেউ শুনল না।” এই অপবাদ কি এবার ওরা মুছে দিতে পারবে? প্রশ্ন আতঙ্কিত ওই মহিলার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.