তন্ময় মুখোপাধ্যায়: নেহাতই দুর্ঘটনা। তার জেরে পুড়ে গিয়েছিল ত্রিনয়নীর মুখখানি। দেবীর রোষের মুখে পড়তে হবে। এই ধারণার বশে দশভুজার আরাধনা বন্ধ রেখেছিলেন প্রবীণরা। মুখ পোড়া বলে কি মা পুজো পাবে না? খোদ উমা নাকি স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন পোড়া মুখেই তাঁকে পুজো দিতে হবে। সেই থেকে ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়িতে কালো মুখেই মাতৃ বন্দনা আয়োজন করা হয়।
[মণ্ডপেই তথ্যভাণ্ডার, মালদহের পুজোয় এবার বঙ্গদর্শন]
এভাবেই পুজো প্রায় চার শতক পেরিয়ে গেল। এবছর ধরলে পুজোর বয়স ৪৩৪ বছর। এখন ক্যানিংয়ের দিঘিরপাড়ে পুজো হলেও, ভট্টাচার্য পরিবারের পূর্বপুরুষরা থাকতেন বাংলাদেশে। ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামে শুরু হয়েছিল মাতৃ আরাধনা। পুজোর সূচনার কয়েক বছরের মধ্যেই অঘটন। পরিবারের বর্তমান সদস্য রাজীব ভট্টাচার্য জানান, তখন দুর্গা মন্দিরের পাশে ছিল মনসা মন্দির। পুরোহিত মনসা পুজো সেরে দুর্গাপুজোয় এলে একটি কাক সে সময় চলে আসে। কাকটি মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের সলতে নিয়ে উড়ে যার। কোনওভাবে সেটি দুর্গা মন্দিরের চালে পড়ে যায়। এর ফলে আগুন লেগে পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির-সহ প্রতিমা। পুজোর মধ্যে এমন ঘটনায় বাড়ির প্রবীণরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। পরিবারের সদস্যরা মনে করেছিলেন দেবী হয়তো পুজো আর চাইছেন না। এই ভেবে বন্ধ রাখা হয় পুজো। এরপরই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এক রাতে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য। জানা যায়, দেবী স্বপ্নাদেশে বলেছিলেন, তাঁর পুজো কোনওভাবেই বন্ধ করা যাবে না। ওই পোড়া রূপেই যেন তিনি পুজো পান। দেবীর আদেশ পাওয়ার পর থেকে মহামায়ার পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীরের মূর্তিতেই চলে আসছে মাতৃ আরাধনা। দেবীর মূর্তির কারণেই অন্যান্য পুজোর তুলনায় এই বাড়ির পুজো স্বতন্ত্র। দেবীর সারা শরীর ঝলসানো, তাম্রবর্ণ। এখানে মায়ের সন্তানদের অবস্থানও বেশ আলাদা। ভট্টাচার্য বাড়িতে গণেশ মায়ের ডান নয়, বাম দিকে থাকেন। পুড়ে যাওয়ার মূর্তির মতো অনেক অলৌকিক ঘটনাও রয়েছে এই বাড়ি ঘিরে। বর্তমান সদস্য রাজীব ভট্টাচার্যর কথায়, বেশ কয়েক বছর আগে পুজোর সময় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। আঁধার নেমে এসেছিল মণ্ডপে। কোনওভাবে বাড়িতে চলে এসেছিল বিদ্যুৎ। যার ব্যাখ্যা সরলভাবে করা যায় না।
[‘হ্যান্ডওয়াশ’ দিয়ে হাত ধুলেই বীরভূমের মণ্ডপে মিলবে ভোগ]
আর পাঁচটা বাড়ির পুজোর মতো আর্থিক কারণে কিছুটা আড়ম্বর কমেছে। সেই ঘাটতি নিষ্ঠা দিয়েই মেটান বর্তমান পরিবারের সদস্যরা। যে আন্তরিকতার টানে শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, দূরের মানুষ এই পুজোয় আসেন। ঢাকায় যে কাঠামোয় পুজো হত, এখনও সেভাবে একচালা মূর্তিতে পুজো হচ্ছে। আগে মহিষ বলি হলে,ও বর্তমানে ফল বলি হয়। মহানবমীতে হয় শত্রু বলি। আতপ চাল দিয়ে কাল্পনিক মানুষের মূর্তি বানিয়ে তাকে বধ করা হয়। এভাবেই কৃষ্ণ-মুখী দুর্গা পুজোর রং বদলে দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.