চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: অবশেষে সাফল্য পেল এনডিআরএফ। আসানসোলের কুলটির নিয়ামতপুরের আকনবাগানের বেআইনি খনি থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার হল। ঘটনার চারদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার হওয়া ওই তিন যুবকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
রবিবার গভীররাতে কয়লা চুরি করতে বেআইনি খনিতে নেমেছিল চার যুবক। খনিমুখ থেকে সামান্য ভিতরে যেতেই বিষাক্ত মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড বেরতে থাকে। এক যুবক কোনওক্রমে পালাতে সক্ষম হলেও, বাকি তিনজন আটকে পড়েন খনির মধ্যে। সন্তোষ মারাণ্ডি, কালীচরণ কিসকু, ও বিনয় মূর্মূ নামে নিখোঁজ এই তিনজনই আকনবাগান এলাকার বাসিন্দা। ইসিএলের মাইনস রেসকিউ টিম ও আসানসোল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ব্যর্থ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার আসে এনডিআরএফ।
বৃহস্পতিবার সকালে ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অভয় কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে শুরু হয় কাজ। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩২ জনের সদস্য তাঁদের অত্যধিক সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। জেসিবি মেশিন দিয়ে প্রায় ৩০ ফুট মাটি কাটা হয় সুড়ঙ্গের উপরে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রথমে তিন সদস্য ঢুকতে প্রস্তুত হন। তার আগে একজোস্ট ফ্যানের পাইপ সুরঙ্গে ঢুকিয়ে টানা হয় বিষাক্ত গ্যাস। ২০০ পিপিএম হাইড্রোজেন সালফাইড বেরিয়ে যাওয়ার পর তিন সদস্যের দল ঢোকে সুড়ঙ্গ পথে। তাঁরা জানান, ইঁদুরের গর্তের মতো ওই সুড়ঙ্গটি প্রথমে ৬ ফুট গিয়ে বাঁ দিকে বেঁকে গিয়েছে ১২ ফুট। সেখান থেকে আরও ১০ ফুট বেঁকে গিয়েছে ডানদিকে। সামান্য ওই ২৭ ফুটেই ৩০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রয়েছে। এরপরেই তাঁরা বুঝিয়ে দেন উপরের মাটি কোনদিক দিয়ে কতটা কাটতে হবে। তাঁদের পরামর্শ মতো ফের শুরু হয় জেসিবি দিয়ে মাটির কাটার কাজ। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ফের সুরঙ্গ পথে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ফের চালানো হয় একজোস্ট ফ্যান। সুড়ঙ্গ পথে ফের ঢোকে তিন সদস্যের দল। আবারও বেরিয়ে এসে তাঁরা বুঝিয়ে দেন কতটা মাটি কাটতে হবে। এরপরেই সন্ধান মেলে অবৈধ খনির চালের।
এরপর রাত দশটা নাগাদ কালীচরণ কিসকুর দেহ উদ্ধার করে এনডিআরএফ। দুর্গন্ধ ঢাকচে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়। এরপর ১১টা ২৪ মিনিট নাগাদ বিনয় মূর্মূ এবং সাড়ে বারোটা নাগাদ সন্তোষ মারাণ্ডির দেহ উদ্ধার হয়। তিনজনের দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শোকের ছায়া গোটা এলাকায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.