জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার আগে পড়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার শংকর প্রসাদ মাহাতো বলেন, “তিনজনের কমিটি তৈরি করে পুরো রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কেউ দোষী হলে অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।” পাশাপাশি হাসপাতাল সুপারের কাছে মৃত ব্যক্তির পরিবার মৃতদেহ সরকারিভাবে সৎকারের আবেদন জানিয়েছে।
প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার বিকেলে বনগাঁ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল মাধব নারায়ণ দত্তকে। বনগাঁ নিউমার্কেটে মুদির দোকান ছিল তাঁর। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে করোনা বলেই সন্দেহ করেন। কিন্তু রাত বাড়তে থাকলে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বনগাঁ হাসপাতালের তরফ থেকে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করার কথা বলা হয়। মাধববাবুর স্ত্রী আলপনা দেবী জানান, হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য কেউ সাহায্য করেনি। করোনা শুনে এগিয়ে এল না কেউ। তিনি স্বামীকে ধরে ধরে ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের বিল্ডিং ও সেখান থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। অভিযোগ, স্ট্রেচার চাইলেও কেউ এগিয়ে দেননি। মাধববাবু তখন শ্বাসকষ্টে কাহিল হয়ে পড়েছেন। হাঁটার ক্ষমতা ছিল না। স্ত্রী একা ধরে রাখতে পারনেনি। হঠাৎই হাসপাতালের চাতালে পড়ে যান তিনি। আলপনাদেবীর অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীদের গিয়ে বহুবার ডেকেছি। একজনও কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই বলে দেয় করোনা রোগীকে ধরা যাবে না।”
এভাবেই প্রায় আধ ঘণ্টা কেটে যায়। হাসপাতালের চাতালে পড়ে ছিলেন ওই প্রৌঢ়। হাসপাতালের কর্মীরা দেখেও না দেখে চলে যান। স্ত্রী ডাকাডাকি করায় প্রায় তিরিশ মিনিট পর পিপিই কিট পরে আসেন ডাক্তাররা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। হাসপাতালের চাতালে পড়ে থেকেই মৃত্যু হয় ওই প্রৌঢ়ের।
বনগাঁ হাসপাতালের এহেন অমানবিক আচরণের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস কুমার রায়। তিনি বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তদন্ত চলছে। যাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সোমবার এই ঘটনার তদন্তে হাসপাতালের তরফেও একটি কমিটি গঠিন করা হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.