মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: ঝাড়খণ্ডের অভিনেত্রী রিয়া কুমারীর হত্যাকাণ্ডে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি। স্বামীর পর পুলিশের জালে তাঁর দেওর। ধৃতের নাম সন্দীপ কুমার। বয়ানে অসংগতি থাকায় দীর্ঘক্ষণ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এর আগে বুধবার রাতে মৃতার স্বামী প্রকাশ কুমারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, খুনের কথা এখনও অস্বীকার করছে সে।
রিয়া প্রকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী। রিয়ার নামে বড় অঙ্কের টাকার জীবনবিমার পলিসি ছিল। এছাড়া ইউটিউবে ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় উপার্জনও ভাল হচ্ছিল। রিয়ার দাদা অজয় জানিয়েছেন, রিয়ার টাকাতেই গাড়ি-বাড়ি করে প্রকাশ। স্ত্রীকে সামনে রেখে ব্যাংক থেকে ঋণও নেয়। অজয়ের দাবি, সংসার চলত রিয়ার টাকাতেই। টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশ ও রিয়ার মধ্যে অশান্তি শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি প্রথম স্ত্রী সারদার সঙ্গে প্রকাশের যোগাযোগ থাকার খবরে বছরখানেক আগে তুমুল অশান্তি হয় দু’জনের। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আইনত বিচ্ছেদ না হওয়ায় বছর দশেক আগে রিয়া ও প্রকাশের বিয়ে হয়েছিল মন্দিরে মালাবদল করে। পুলিশ জেনেছে, গত বছর দু’জনের মধ্যে প্রবল গোলমালের পর রিয়া বাপের বাড়ি চলে যান। থানায় প্রকাশের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করেন। মাসচারেক আগে প্রকাশ নিজের ভুল স্বীকার করে রিয়াকে ফিরিয়ে আনে। ফের দিনকয়েক আগে দু’জনের গোলমাল হয়। তা মিটে যাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে রিয়া ও মেয়েকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় প্রকাশ।
পুলিশ মনে করছে, প্রকাশের জানানো ছিনতাইয়ের কথা সম্ভবত ‘বানানো’। কারণ সিসিটিভির ফুটেজ বা অন্য কোনও সূত্রে অন্য কোনও গাড়ি আসার প্রমাণ নেই। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও বলছে, ১২ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছিল রিয়ার। অথচ ১২ ঘণ্টা আগে প্রকাশ বাগনানে প্রবেশ করতে পারেনি। বাগনানে তারা আসে সকাল ছ’টার কাছাকাছি। মহিষরেখার কাছে যে কারখানার কাছে সিসিটিভির ফুটেজে প্রকাশের ছবি দেখা গিয়েছিল, তখন সময় ছিল সকাল ৬.১৬ মিনিট। পুলিশের অনুমান, রিয়াকে অন্যত্র মেরে এখানে আনা হয়েছে। জীবনবিমার টাকা হাতিয়ে বাজারে হওয়া বিপুল দেনা শোধের পাশাপাশি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে ফের সংসারে থাকার জন্যই কি রিয়াকে খুন করেছে প্রকাশ, উঠছে প্রশ্ন।
তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, ঘুমন্ত অবস্থাতেই রিয়াকে খুন করা হয়েছে। মাথার খুলি ফেটে গিয়েছে। খুনের আগে কোনও ওষুধ খাইয়ে রিয়াকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা জানতে দেহের নমুনা ভিসেরা টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকাশের হাতে গান পাউডারের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। বাগনান থানায় বালির উপর রিয়াদের গাড়ির চাকার ছাপ নেওয়া হয়। চন্দ্রপুরের ঘটনাস্থলে পাওয়া চাকার দাগের সঙ্গে বালির উপর নেওয়া ছাপ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রকাশ ও সন্দীপকে জেরা করে এই ঘটনা সম্পর্কে আরও নানা তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা তদন্তকারীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.