সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মা-বাবাকে ওরা দেখেনি। অনাথ আশ্রমেই বেড়ে ওঠা। দুর্গোৎসবের আনন্দ থেকে ওরা অনেকটাই বঞ্চিত। মহামায়ার কাছে পৌঁছালেও জীর্ণ, মলিন পোশাক যেন ওদের আনন্দ শুষে নিত। দোকানে ঝকঝকে মোড়কে থাকা জামা-কাপড় দেখে ওদের শুধুই দীর্ঘশ্বাস পড়ত।তবে এবছর কচি-কাঁচাদের সেই যন্ত্রণা, আক্ষেপ অনেকটাই মিটল। পুজোর আগে ওরা দিনটা কাটাল একটু অন্যভাবে। দল বেঁধে শপিং মলে গেল। নিজেদের পছন্দ মতো চুড়িদার, টপ এবং জামা, প্যান্ট নিতে পারল। কেনাকাটা শেষে খাওয়া-দাওয়াও করল দলবেঁধেই। পুজোর আগে নতুন পোশাক এবং এমন আপ্যায়ণে খুশির ঝিলিক সবার চোখে-মুখে।
[দুর্গামূর্তিতেই অনাথ সুজিত খুঁজে চলেছে মা-বাবাকে]
বর্ধমান শহরের একটি আদিবাসী আশ্রমের অনাথ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পুজোর আগে এমন আয়োজন করেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সভাধিপতি দেবু টুডু বাচ্চাদের শপিং করাতে নিয়ে যান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, চলমান সিঁড়ি, স্বয়ংক্রিয় দরজা। এসব দেখে মণিকা সোরেন, বিমলা হাঁসদারা বুঝে উঠতে পারছিল না কী করবে। বিস্ময় কাটার আগেই তারা পৌঁছে গিয়েছিল জামা-কাপড়ের বিভাগে। নিজেদের পছন্দমতো কেনার স্বাধীনতা ছিল এই শিশুদের। ঘোর কাটছে না মণিকা, বিমলাদের।
[মেয়েকে পিঠে নিয়েই মণ্ডপে যাবেন বাগডোগরার ‘উমা’]
কচিকাঁচাদের এই তৃপ্তি ছুঁয়ে গিয়েছে দেবু টুডুকেও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, “ওরা যে অনাথ তা ওদের বুঝতে দিলে চলবে না। সমাজের আর পাঁচটা শিশুর মতোই ওরা যাতে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে, আনন্দে উৎসবে মেতে উঠতে পারে, তার জন্য চেষ্টা করছি মাত্র।” হইহই করে শপিং করে অনাথ আশ্রমের জনা পঁয়ত্রিশ পড়ুয়া। যাদের বেশিরভাগই ছাত্রী। সভাধিপতির সঙ্গে শহরের মলে গিয়ে জমিয়ে কেনাকাটার পর মোগলাই, রোল, চাউমিন। যার যা ইচ্ছা তাই খেয়েছে। মণিকার কথায়, “উনি আমাদের শুধু অভিভাবকই নন, বাবার মতোই। সারাবছরই বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন। পুজোর আগে বাবার মতোই দোকানে নিয়ে গিয়ে নতুন জামাকাপড় কিনে দিলেন। সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের।” ছোট্ট ছেলেমেয়েদের এই হাসি বুঝিয়ে দেয় শারদোৎসবের আসল মানে। যা মনের কোণের সব দীনতা মুছে দিতে শেখায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.