ফাইল ছবি
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শুটআউট অ্যাট শক্তিগড়। কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনের ঘটনার হাড়হিম করা দৃশ্যের ‘লাইভ’ ভিডিও ফুটেজ এবার ভাইরাল হল।
ঘটনার ১০ দিন পর প্রকাশ্যে এসেছে রাজু ঝাকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেওয়ার দৃশ্য। ভিডিও ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন। ভাইরাল হওয়া ভিডিও সিসি ক্যামেরার অরিজিনাল বা ‘র’ ফুটেজ নয়। অরিজিনাল বা ‘র’ ফুটেজ কোনও মনিটরে প্লে করে তা থেকে ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। তাতে অবশ্য ঘটনার ভয়াবহতা কম কিছু নেই।
গত ১ এপ্রিল শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে খুন হন বেআইনি কয়লা কারবারের বেতাজ বাদশাহ রাজু। সংবাদ প্রতিদিন ধারাবাহিক ভাবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্তকারীদের বয়ানের ভিত্তিতে কীভাবে রাজু ঝাকে খুন করা হয়েছিল তা প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার ভাইরাল হওয়া ভিডিও তাতেই যেন সিলমোহর দিয়েছে।
ভাইরাল হওয়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সাদা রঙের চারচাকা গাড়িটি জাতীয় সড়কের কলকাতামুখী লেনে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাজুর সর্বক্ষণের সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নেমে ঝালমুড়ি কিনছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাদা গাড়ির মালিক, গরুপাচার মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ ও তার গাড়ির চালক শেখ নুর হোসেন। রাজু অবশ্য গাড়ি থেকে নামেনি। সামনের সিটেই বসেছিল। ঝালমুড়ি কিনে ব্রতীন চালককে কিছু (গুটখা) কিনে আনতে বলে। চালক দৌড়ে তা কিনতে যায়। ঝালমুড়ি খেতে খেতে গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসে লতিফ ও ব্রতীন। ইতিমধ্যে একটি নীল রঙের গাড়ি কলকাতার দিক থেকে ব্যাক করে এসে রাজুদের গাড়ির পাশে দাঁড়ায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে দুই শার্প শুটার নীল গাড়ি থেকে নেমে আসে। রাজু গাড়ির যেদিকে বসেছিল সেই দরজার বাইরে থেকে পর পর গুলি ছুড়তে থাকে। কালো পোশাকে থাকা শুটার সাদা গাড়ির পিছন দিক দিয়ে গিয়ে তাদের গাড়িতে চাপে। আর আর একজন কয়েকটি গুলি চালিয়ে নীল গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আবার ফিরে রাজুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তদন্তকারীদের অনুমান মৃত্যু নিশ্চিত করতেই দ্বিতীয়বার এসেছিল। তার পর সে বিনা বাধায় হেঁটে নীল গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। সেই সময় তার হাত থেকে পিস্তলটি পড়ে যায়। সেটিকে কুড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে চম্পট দেয়।
পুরো ঘটনাটি এক হাত ব্যবধান থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবু জিয়া শেখ। আশপাশে আরও কয়েকজন ছিলেন। কার্যত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। চোখের সামনে প্রথমবার এমন শুটআউটের দৃশ্য দেখে সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাঁদের বিহ্বলতা যখন কাটে ততক্ষণে আততায়ীরা পগার পাড় হয়ে গিয়েছে। ঘটনার পরই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তরফে ল্যাংচার দোকান সহ বিভিন্ন জায়গার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই সব ফুটেজে অবশ্য আততায়ীদের স্পষ্ট ছবি ধরা পড়েনি বলে জানা গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে জেলা পুলিশের তরফে সেই সব ফুটেজ যাতে লিক না হয় তার জন্য কড়া অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সেই ফুটেজ লিক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুমান করা হচ্ছে, তদন্তের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সেই ফুটেজ পাঠিয়েছিল জেলা পুলিশ। সেই ফুটেজ কম্পিউটারে চালিয়ে তা থেকে ভিডিও তুলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
এখনও পর্যন্ত পুলিশে তদন্তে উঠে এসেছে, শার্প শুটাররা ভিনরাজ্য থেকে এসেছিল। নীল গাড়িটি দিল্লি থেকে চুরি করা। তবে খুনের মূল মাথা কে, এখনও স্পষ্ট হয়নি তদন্তকারীদের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.