বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হাজারও বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আগেই মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি প্রত্যাখ্যানের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। দিন দুই আগে কৃষ্ণনগরের সভা থেকেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিমা পেতে আয়ুষ্মান কার্ড নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। রাজ্য সরকারই এই বিমার সিংহভাগ টাকা দেয়, কেন্দ্রের ভাগটুকুও এবার থেকে দেবে। আর শনিবার, সেই কৃষ্ণনগরেই আয়ুষ্মান কার্ড বিলি ঘিরে ধুন্ধুমার।
কৃষ্ণনগরের হেড পোস্ট অফিস থেকে বিলি করা হচ্ছিল আয়ুষ্মান কার্ড। খবর পেয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশংকর দত্তর নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা পোস্ট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। নরেন্দ্র মোদির ছবি এবং পদ্মফুলের মতো ফুল ছাপ দেওয়া কার্ড মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এরপর তাঁরা সটান ঢুকে পড়েন পোস্ট অফিসের মধ্যে। পোস্ট মাস্টারকে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, ওই কার্ড বিলি করা হলে পোস্ট অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। এসব দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ওই পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার রীতিমতো থতমত খেয়ে যান। ঠিক কী করবেন, বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিলেও পোস্ট মাস্টার প্রমোদ কুমার বাগ জানান, ‘আমি পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত জানাবেন, আমরা সেটাই করব।`
[পড়ুয়া ও শিক্ষিকার সংখ্যা ১! বেহাল দশা শিলিগুড়ির স্কুলের]
গত বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে রাজ্যকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে স্পষ্টই বলেন, ‘সব কাজ আমরা করব। তুমি নরেন্দ্র মোদি দালালি করবে? তা চলবে না।` কারণ, আয়ুষ্মান কার্ড বলে স্বাস্থ্যবিমার যে কার্ড বিলি করা হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে, তাতে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কোনও উল্লেখ নেই। অথচ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প এক হয়ে যাওয়া নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্পের নাম ভারত স্বাস্থ্যসাথী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই চুক্তির খেলাপ করা হল বলে অভিযোগ। এর বিরোধিতা করেই মুখ্যমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন।
[জেলাশাসকের পর বিডিও, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ফুঁসছে ধলুয়াবাড়ি]
কিন্তু তারপরেও নদিয়ায় হেড পোস্ট অফিস থেকে বিভিন্ন পোস্ট অফিসে পৌঁছে যায় ওই কার্ড। বাড়ি বাড়ি পৌঁছেও গিয়েছে একাধিক এই কার্ড। পোস্ট অফিসগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় তারা কার্ড বিলি বন্ধ রাখেনি। তাই কার্যত জোর করেই ওই কার্ড বিলি বন্ধ রাখানোর পথে হাঁটল তৃণমূল কংগ্রেস। জেলা সভাপতি গৌরীশংকর দত্তর কটাক্ষ, এরপরও যদি কার্ড বিলি হয়, তাহলে বাইরে পোস্ট অফিসের বদলে বিজেপি অফিস হোর্ডিং দিয়ে তবেই বিলি হবে। নয়তো পোস্ট অফিসের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ছবি: সুজিত মণ্ডল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.