অর্ণব আইচ: লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় এবার সিবিআইকে নোটিস সিআইডি’র। তদন্তকারী আধিকারিককে উদ্দেশ্য করে নোটিসটি পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, আত্মহত্যা নাকি লালন শেখকে খুন করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত তথ্যের খোঁজে নোটিস পাঠানো হয়েছে।
রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে নোটিসে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। ওই নোটিসে উল্লেখিত প্রশ্নগুলির মধ্যে রয়েছে লালনের মৃত্যু হল কীভাবে? ক্যাম্পের ইনচার্জ কে ছিলেন? ঘটনার সময় ক্যাম্পে কারা ছিলেন? তাঁদের ভূমিকা ঠিক কী? সিনিয়র তদন্তকারী আধিকারিক ছিলেন কিনা? ক্যাম্পে সিসিটিভি ছিল কিনা? থাকলে সেই ফুটেজও চাওয়া হয়েছে। সিবিআই আধিকারিকরা কী উত্তর দেন, সেদিকেই এখন নজর সকলের।
৩৯ বছর বয়সি লালন, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। রামপুরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। খুব অল্প বয়সেই সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নেন। শুরু করে বিরিয়ানির দোকান। কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসার উন্নতি হয়। দোকান বন্ধক রেখে বাসের ব্যবসায় যুক্ত হয় লালন। সঙ্গে শুরু হয় গ্রামে চড়া সুদের কারবার। উল্লেখ্য, বগটুই গ্রামে এই চড়া সুদের ব্যবসা এখনও
রমরমিয়ে চলে। টাকা জমতেই নেমে পড়ে রাজনীতিতে। ২০১৩ সালে এলাকার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী আঙ্গুর শেখের সমর্থক ছিলেন লালন।
শোনা যায়, তাঁকে টাকাপয়সার জোগানও দিতেন লালন। তৃণমূলের প্রার্থী তখন ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবি। রাজনৈতিক কারণে ভাদুর সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় লালনের। জয়ী হন লালন ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস প্রার্থী। জয়ী হতেই লালনের দাপটে তিন বছর গ্রাম ছাড়া থাকে ভাদু শেখ। তিন বছর পার হতেই গ্রামের এক অশান্তিতে ভাদু আর লালন জোট বাঁধে। লালন তৃণমূলের সৈনিক হয়ে ওঠে। লালনের বিরুদ্ধে জমি দখল, তোলাবাজি-সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাদু শেখ পঞ্চায়েতে জয়ী হয়ে উপপ্রধানের দায়িত্ব পান। ভাদু-লালন দু’জনে হরিহর আত্মা হয়ে ওঠেন। দু’জন দু’জনের ছায়াসঙ্গী হয়ে যান।
লালন-ভাদু জুটি নজরে পরে অনুব্রত মণ্ডলের। গত ২১ মার্চ ভাদু শেখকে তার বাড়ির সামনে খুন হতে হয়। খুনের সময়ও ভাদু লালনের কাছে ছিল। ভাদু খুনের পালটা বগটুই গ্রামে গণহত্যা চলে। এমনকি পরেরদিন সকালেও গ্রামে যেতে সাংবাদিকদের বাধা দেয় লালন। ন’মাস পরে ৩ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হন লালন। তার ৯দিনের মাথায় সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় লালনের। নিহতের স্ত্রীর দাবি, খুন করা হয়েছে লালনকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.