রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমটি সাজানো হয়েছে ট্রেনের বগির আদলে। নাম দেওয়া হয়েছে তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস। বানানো হয়েছে তমলুক রেল স্টেশনও। বিদ্যালয় জুড়ে নানা অলংকরণ। যা দেখে চোখ আটকে যেতে বাধ্য। এই অসাধারণ পরিবেশেই পড়াশোনা করে তমলুকের পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা।
মোট চারটি মিউজিয়ামও রয়েছে স্কুলে। একটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ-সহ নানা ধরনের প্রাণী। রয়েছে ১০০ বছরের প্রাচীন অসংখ্য মুদ্রা, পুঁথি-সহ লোকশিল্পের নানা সামগ্রী। দেওয়ালে রয়েছে পুতুল, সিংয়ের কাজ, পোড়ামাটির জিনিস, মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের ইঁট, বাঁশের সামগ্রী, তালপাতার সেপাই, বাঁশি, পুরুলিয়ার মুখোশ, আসামের জাপি এবং ১০০-র বেশি ভিন্ন ধরনের ঝিনুক ও শঙ্খ। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের পটচিত্র সম্পর্কে ধারনা দিতে স্কুলের দেওয়ালে চিত্রিত হয়েছে মেদিনীপুর ও কালীঘাটের পটচিত্র। পিংলার নয়া থেকে দুঃখুশ্যাম চিত্রকরকে এনে পটের গানের আয়োজন করা হয়েছে। নদিয়ার বিধান বিশ্বাসকে দিয়ে প্রতি বছর আল্পনার ওয়ার্কশপ করা হয় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে। এছাড়া নিয়মিত গান, আবৃত্তি, গল্পবলা, বিপর্যয় মোকাবিলা, ছড়া বলা, নাচের ওয়ার্কশপ হয় এখানে।
বিদ্যালয়ের মধ্যেই রয়েছে একটি পার্ক। স্কুলের দেওয়ালে বিদ্যাসাগরের জীবনের নানা তথ্য ও ছবি সহ প্রদর্শনী করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দুটো পত্রিকা। দেওয়াল পত্রিকায় প্রতিভার বিকাশ নজরকাড়া। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কৃষ্ণা বেরা, পুতুল পাখিরা কথায়, তমলুক শহরের বুকে থেকে সরকারি স্কুল হয়েও ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি সবসময়ই। বিভিন্নভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ে যুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। ২০১৯ সালে ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পেয়েছে তমলুকের এই স্কুল। এর আগে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার, বেস্ট পারফর্মিং অ্যাওয়ার্ড এবং সবুজ ক্ষুদিরাম পুরস্কার এই বিদ্যালয়ের ঝুলিতে এসেছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৬৯ জন। শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন ৭ জন। জেলার সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে স্বভাবতই খুশি শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে অভিভাবক সকলেই। খুশি স্কুলের পড়ুয়ারাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.