চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কয়লা শিল্পের সঙ্গে পুরাতন ইতিহাস সমৃদ্ধ খনি ও ভবনগুলিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিল ইসিএল। আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরতে ইসিএল কর্তৃপক্ষ হেরিটেজ কমিটি গঠন করতে চলেছে। মিউজিয়াম তৈরি করে সংরক্ষণ করা হবে অতীতের বিশেষ যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামগুলিকে। নর্থ-ইষ্টার্ন কোলফিল্ডের উদ্যোগে ভারতের প্রথম কোল হেরিটেজ পার্ক ও মিউজিয়াম তৈরি হয় অসমে। দেশের দ্বিতীয় কোল হেরিটেজ মিউজিয়ামটি এবার গড়া হবে আসানসোল -রানিগঞ্জে।
[ বদলাচ্ছে ‘অর্ধেক আকাশ’, কনকাঞ্জলিতে নিয়ম ভাঙলেন নববধূ]
১৭৭৪ সালে রানিগঞ্জে কয়লা উত্তোলনের সূত্রপাত। এমজে হিটলি এবং জন সামনার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে কয়লা তোলার অনুমোদন নিয়ে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছিল এখানে। কিন্তু কয়লার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় এক বছরের মধ্যেই সেই উদ্যোগ গুটিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনার ৩০ বছর পরে ১৮১৬ সালের শেষের দিকে রুপার্ট জোন্স ফের এই এলাকায় কয়লার অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন। তখন এগারা গ্রামে উচ্চমানের কয়লার খোঁজ মেলে। ঠিক এই সময়ে কয়লা শিল্পে প্রথম ভারতীয় হিসেবে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আবির্ভাব। ১৮২৮ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথের কার টেগোর অ্যান্ড কোম্পানির নীল কারখানা পরিবর্তিত হয় ভারতের কয়লা শিল্পের প্রথম প্রশাসনিক ভবন হিসেবে। ঠিক এর ১৫ বছর বাদে ১৯৪৩ সালে গিলমোর হামফ্রে অ্যান্ড এবং কার টেগোর অ্যান্ড কোম্পানির সংযুক্তিকরণের ফলে জন্ম নেয় বেঙ্গল কোল কোম্পানি। ইসিএলের সিএমডি কারিগরি সচিব নিলাদ্রি রায় বলেন, “ইসিএল উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করতে চলেছে ‘ধরোহার’ প্রকল্প। যেখানে সংরক্ষিত থাকবে কয়লা শিল্পের ইতিহাস। সমস্ত খনি ও সম্পত্তিগুলি সংরক্ষিত হবে ‘ধরোহার’ প্রকল্পে।” সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছিল প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কয়লাকুঠি। সেই প্রিন্স দ্বারকানাথের কয়লাকুঠিটিরও এখন ভগ্নদশা। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনমাস আগেই রাজ্য হেরিটেজ বোর্ড তকমা দিয়েছে।
ইসিএলের ১৪ টি এরিয়ার বিভিন্ন খনির ইতিহাসের খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করতে ইতিমধ্যেই তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইসিএলের সিএমডি প্রেমসাগর মিশ্রের সম্মতিতে গঠিত হয়েছে ওই কমিটি। ইসিএলের ডিপি বিনয়রঞ্জন বলেন, “মাইনিং বা খনি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও পর্যটকরা। আর খনির সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে থাকলে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। সেই ঐতিহাসিক তথ্যগুলিই সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। রানিগঞ্জে রয়েছে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রথম কয়লাকুঠি। ব্রিটিশ কোল ও বেঙ্গল কোলের ইতিহাসও রয়েছে আসানসোল-রানিগঞ্জ জুড়ে।’
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
[ উত্তরবঙ্গে ক্রমশ কমছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা, উদ্বেগে বনদপ্তর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.