ফাইল ছবি
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: একদিকে প্রতিকূল আবহাওয়া, অন্যদিকে বেড়ে চলা লোকসান ও শ্রমিক আন্দোলনের সাঁড়াশি আক্রমণ। দার্জিলিংয়ের চা শিল্প নিয়ে ক্রমাগত বাড়ছে দুশ্চিন্তা। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে অর্ধেকের বেশি উদ্যোগপতি চা বাগান বিক্রি করে পাহাড় ছাড়তে মরিয়া হলেও মিলছে না খদ্দের।
দার্জিলিং পাহাড়ে এবার চায়ের মরশুম শুরু হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ৮৭টি কারখানার বেশিরভাগ মার্চ মাসের গোড়াতেও চা তৈরির কাজ শুরুই করতে পারেনি। কারণ, বৃষ্টি না মেলায় এখনও চা গাছ ন্যাড়া। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি মুখ তোলেনি। তার উপর রাতের তাপমাত্রা এখনও অনেকটাই নিচে। এই আবহাওয়া চা পাতা হওয়ার উপযোগী নয়। এমন পরিস্থিতিতে মিরিক-সহ পাহাড়ের বিভিন্ন চা-বাগানে আগামী পুজো বোনাস এখনই ঘোষণার দাবিতে শুরু হয়েছে আন্দোলন। শ্রমিকরা চা পাতা তোলার কাজ বন্ধ রেখেছে।
সৌরাণি, যুগারী, গয়াবাড়ির মতো চা বাগানগুলো স্তব্ধ হয়ে আছে। পরিচর্যার কাজও লাটে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়ের ৮৭টি চা বাগানের মধ্যে অন্তত ৪০টির মালিক লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে বাগান বিক্রির জন্য মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে। কারণ, চলতি মরশুমে শুধু নয়, গত তিন-চার বছরে লোকসান উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। পাহাড়ের চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে দার্জিলিং পাহাড়ে চা পাতা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬.১ মিলিয়ন কেজি। ২০২৪ সালে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৫.১ মিলিয়ন কেজি। পরিস্থিতি দেখে চা বণিকসভাগুলো মনে করছে এবার উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমতে পারে। কিন্তু উৎপাদন কমে লোকসানের বহর বেড়ে চললেও চা বাগান মালিকরা কার্যত নিরুপায়। কারণ, বাগান বিক্রির মরিয়া চেষ্টা করেও ফাঁদ কাটিয়ে বের হতে পারছেন না। কারণ, খদ্দের মিলছে না।
নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ের আবহাওয়া দ্রুত পাল্টাচ্ছে। কমছে বৃষ্টিপাত। গত দু’দশকে প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টি কমেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। গত বছর ২২ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮ ইঞ্চি। এবার আরও কমেছে। ফলে কাচা পাতার উৎপাদন ও গুণগতমান কমেছে। দার্জিলিং পাহাড়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দু’মাস ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’-এর পাতা তোলা হয়। ওই পাতা থেকে অন্তত দুই মিলিয়ন কেজি চা তৈরি হয়। এই পরিমাণ মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ। ইন্ডিয়ান প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এটাই মরশুমের সেরা দার্জিলিং চা। সেটা জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে রফতানি হয়। এবার বৃষ্টির অভাবে এখনও পাতা মেলেনি। ওই কারণে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে চা উৎপাদন পুরোপুরি মার খাবে।
নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিত্রুকা জানান, চা বাগান মালিকরা বাগান বিক্রি করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দার্জিলিং পাহাড়ের ৮৭টি বাগানের মধ্যে ১৫টি বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। ২৫টি চা বাগান মালিক খদ্দের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সতীশ মিত্রুকা বলেন, ‘‘আমিই বাগান বিক্রির চেষ্টা করছি। একদিকে প্রকৃতির মার। অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলন ও নেপালের নিম্নমানের চা দার্জিলিংয়ের বলে চলার কারবারের মধ্যে টিঁকে থাকা সম্ভব নয়।’’ পাহাড়ের চা-বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের মতো চা পর্ষদও নীরব। ওই পরিস্থিতিতে বাগান, কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.