অর্ণব দাস, বারাকপুর: হাজার চেষ্টা করেও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সিপিএমের সম্মেলনের কমিটি নির্বাচনে ভোটাভুটি আটকাতে পারল না আলিমুদ্দিন। কমিটি নির্বাচন করতে ভোট করতেই হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমের জেলা সম্পাদক কে হবেন? তাই নিয়েও চলছে জোর চর্চা। আগামী ১৬ তারিখ ভোটাভুটি হবে বলে খবর। ২৬ তম জেলা সম্মেলন নিয়ে যথেষ্ট আশাহত প্রতিনিধি থেকে পাটি সদস্য, কর্মী ও সমর্থকরা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তার মধ্যে অন্যতম কারণ, তন্ময় ভট্টাচার্যকে কৌশলে বাদ দেওয়া। অন্যটি হল, সম্মেলন কক্ষে সম্পাদকের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও ফের মৃণাল চক্রবর্তীকেই সম্পাদক করতেই প্রবীণদের চেষ্টা। নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে এনিয়ে অসন্তোষ আরও বাড়ছে। ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সব থেকে বড় জেলার সম্মেলন সিপিএমকে পুরোটাই ব্যাকফুটে ফেলে দিল। এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, বিদায়ী জেলা সিপিএমের কমিটিতে ৭০জন সদস্য ছিলেন। বিস্তর মতানৈক্যের মধ্যে ঠিক হয় চলতি কমিটিতে সদস্য হবেন ৭৫ জন। ৭০-এর উপর বয়স হওয়ায় বিদায়ী কমিটির ১০ জনের নাম বাদ পড়েছে। এরপর জেলা কমিটি এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ১৪ জনের নাম আসে। ৭৪ জনের কমিটি ঠিক হয়। পরবর্তীতে খড়দহ থেকে একজনকে জেলা কমিটিতে নেওয়া হবে জানিয়ে একটি জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। এখানেই সুকৌশলে বাদ পড়েন সাসপেন্ডেড তন্ময় ভট্টাচার্য। এনিয়েই অনেকের ক্ষোভ, একজনের জন্য জায়গা ফাঁকা রাখা হলেও, নির্দিষ্টভাবে খড়দহের নাম উল্লেখ করেই বাদ দেওয়া হল তাঁকে।
এই প্রসঙ্গে তন্ময় ভট্টাচার্যর মন্তব্য, “সম্মেলনের সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। আর আমি কমিটিতে থাকার জন্য সিপিএম করি না। সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েই আমি সিপিএমেই ছিলাম, আছি এবং থাকব।” যদিও অনেক প্রতিনিধিই মনে করছেন, মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণের সিলমোহর পড়ল এই সিদ্ধান্তে। তন্ময়কে বাদ দিয়ে কমিটির তালিকা সম্মেলন কক্ষে প্রস্তাব হতেই কোন্দল চরম আকার নেয়। তখনই একে একে ২৯ জন প্রতিনিধির নাম কমিটিতে নেওয়ার জন্য জমা পড়তে থাকে।
কেন্দ্রীয় কমিটির মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যরা বিক্ষুব্ধদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। শেষে কমিটি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন প্রাক্তন বিধায়ক মানুষ মুখোপাধ্যায়। এরপরই মানুষ মুখোপাধ্যায়কে জেলা কমিটিতে থাকার অনুরোধ জানিয়ে একে একে ২৭ জন প্রতিনিধি নিজেদের প্রার্থী পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। যদিও মধ্যমগ্রামে সনৎ বিশ্বাস এবং রাজারহাট নিউটাউনের সৌমেন চক্রবর্তী নিজেরা নাম প্রত্যাহার করেননি। ঠিক হয়, আগামী রবিবার বারাসত জেলা সিপিএম কার্যালয়ে ভোট হয়েই কমিটি নির্বাচন হবে।
বিদায়ী সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীই তৃতীয়বারের জন্য ওই চেয়ারের দাবিদার। এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভোটে মৃণাল পরাজিত হলে জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়ারও সম্ভাবনা থাকছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সনৎ বিশ্বাসকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, “যারা মনে করেছেন জেলা কমিটিতে থাকা উচিত, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটাই আমাদের পার্টির গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো। আজকের পরিস্থিতিতে আমি মনে করি না ভোট হওয়া উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.