সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই রোমিওদের ভিড় জমে যেত স্কুলের সামনে। স্কুল বসে গেলেই পাতলা হয়ে যেত ভিড়। আবার সেই রোমিওরাই জড়ো হত স্কুলের সামনে ছুটির সময়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থানা এলাকার স্কুলগুলির সামনে প্রতিদিনই এই রোমিওদের অত্যাচারে ক্রমেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল ছাত্রীরা। ছাত্রীদের লক্ষ্য করে চলছিল নানা কটূক্তি ও অঙ্গভঙ্গি। শেষমেশ অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে রোমিও অভিযানে নামল পুলিশ। এপর্যন্ত মোট পাঁচ রোমিওকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। তাদের তিনজনকে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়।
রোমিওদের কটূক্তি ও নানারকম কুৎসিত অঙ্গভঙ্গিতে আতঙ্কিত হয়ে উঠছিল ছাত্রীরা। সকালে স্কুল শুরুর আগে থাকতে ও ছুটির সময় মহেশতলার হাইস্কুল ও গার্লস স্কুলগুলির সামনে সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ত কিছু যুবক। স্কুলে ঢুকতে ও বের হতে প্রতিদিনই ওই যুবকদের কুনজরে পড়তে হচ্ছিল ছাত্রীদের। ছাত্রীদের লক্ষ্য করে চলত কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি ও নানা কুপ্রস্তাব। দেওয়া হত প্রেমের প্রস্তাবও। অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল ছাত্রীরা। রোমিওদের রকমসকম দেখে অনেক ছাত্রীই আবার ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত। বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল এসব। সহ্য করতে না পেরে ছাত্রীদের অনেকই বাড়িতে অভিভাবকদের জানিয়েছিল সেসব কথা। অভিভাবকরা একজোট হয়ে পুলিশকে জানান তাঁদের অভিযোগ। অভিযোগ পেয়ে প্রথম কয়েকদিন পুলিশের গাড়ি এলাকায় টহল দিলেও ধরা যায়নি একজনকেও। দূর থেকে পুলিশের গাড়ি আসতে দেখেই কেটে পড়ত তারা স্কুলের সামনে থেকে।
শেষমেষ অন্য পন্থা নিল পুলিশ। আর কাজও হল তাতে।মহেশতলা থানার পুলিশের একটি বিশেষ দল সাদা পোশাকে স্কুলগুলির সামনেই ঘোরাফেরা শুরু করে দিয়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। রোমিওরা বুঝতেই পারেনি বাইক নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলো আসলে পুলিশের লোক। বুধবার পর্যন্ত পুলিশের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে গেল পাঁচ রোমিও। পাঁচজনের মধ্যে দু’জন আবার নাবালক। গ্রেপ্তার না করে ওই দু’জনের অভিভাবককে থানায় ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সামনেই দুই কিশোরকে সাবধান করে দেওয়া হয়। দু’জনের অভিভাবককেও বিষয়টি যথাযথভাবে নজরে রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এদিন আলিপুর আদালতে পাঠানো হয়। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভা মুরুগান জানিয়েছেন, ছদ্মবেশে পুলিশের এই ‘রোমিও অভিযান’ চলবে। পুলিশের এই পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই খুশি ছাত্রী, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক সকলেই। নিজেদের কন্যাসন্তানদের নিরাপত্তায় পুলিশের এহেন পদক্ষেপে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁরা, জানিয়েছেন অভিভাবকরাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.