ছবি: প্রতীকী
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মৃত বাবাকে শববাহী খাটিয়ায় শুইয়ে কাঁধে নিয়ে দাহ করতে শ্মশানের দিকে এগোচ্ছেন ছেলেরা। সঙ্গে আত্মীয়, পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী। কেউ ছড়াচ্ছেন খুচরো পয়সা, কেউ দু’হাত ভরে খই ছড়িয়ে দিচ্ছেন রাস্তায়। এদৃশ্য নজরে পড়তেই গ্রামের আশপাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কানাঘুঁষো, ‘শুনলাম, উনি করোনায় মারা গিয়েছেন? করোনায় মৃত্যু হলে বডি তো দেয় না শুনেছি। তবে কী……।’এমনই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কেউ ঘরের জানলায়, কেউ আবার বাড়ির ছাদে উঠে শুরু করলেন উঁকিঝুঁকি। মনে সংক্রমণের ভয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাঙল ভুল। খাটিয়ার শোয়ানো দেহের উপর নজর পড়তেই অবাক পড়শিরা। এ কী! কোথায় মৃতদেহ? খাটিয়ায় শুয়ে খড়ের পুতুল! বিস্ময়ের ঘোর কাটতে সময় লাগল অনেক। তবে এদৃশ্য দেখে সকলেই নিশ্চিত হলেন, বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে করোনাতেই। সেই কারণেই হাসপাতাল থেকে দেহ দেয়নি। ফলত এই প্রতীকী শবযাত্রা।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকের রায়দিঘির চাপলা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৭২-এর অবসরপ্রাপ্ত ওই স্কুলশিক্ষক করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃতের এক ছেলে জানান, হার্টের অসুখে ভুগছিলেন তাঁর বাবা। চিকিৎসার জন্য প্রথমে মগরাহাট হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে জোকার একটি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় এম আর বাঙুরে (MR Bangur)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানায়, বৃদ্ধ করোনা পজিটিভ ছিল। তাই মৃত্যুর পর দেহ পরিবারকে দেয়নি হাসপাতাল। বাবার মৃতদেহ না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তখনই সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন প্রতীকী সৎকারের। সেইমতো যাবতীয় শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনেই বৃদ্ধের কুশপুতুল দাহ করা হয়। গোটা ঘটনায় কিঞ্চিত হতবাক স্থানীয়রা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.